শেখ মাহতাব হোসেন: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সামনে ঈদুল আজহা। প্রতি বছরের মতো এবারও ডুমুরিয়া উপজেলার গরুর খামারিদের ব্যস্ততা বেড়েছে। হাটে ভালো দাম পেতে প্রস্তুত করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের গরু। নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনের জন্য দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা।
ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে খামারিরা কোরবানির হাটে ভালো দাম পাওয়ার আশায় এখন গরু পালনে ব্যস্ত হাজারো খামারি। এসব খামারে সিন্ধি, পাকিস্তানি, অস্ট্রেলিয়ানসহ দেশীয় বিভিন্ন জাতের গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।
শনিবার ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মিনু সাহার হাট কাঁপানো ৪০ মনের একটি গরু পরিদর্শন করেন ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল কবির, ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ আবু সাঈদ সুমন, ও ডুমুরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ মাহতাব হোসেনসহ আরো অনেকেই মিনু রানীর ৪০ মনের গরু পরিদর্শন করেছেন।
মিনু রানী তার গরুর ৪ বছর বয়স দাম চেয়েছিলেন ১৬ লক্ষ টাকা ১৪ লক্ষ টাকা হলে বিক্রিয় করবেন। গরুর নাম রাজা মানিক রেখেছেন সে গরুকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন গরুকে যাহা বলে গরু তার কথা সব শুনে।
এলাকার বেশ কিছু গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি খামারে ৩-৪ জন লোক নিয়মিত গরু পরিচর্যা করছেন।
তবে উপজেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে এর চিত্র একটু আলাদা। তারা জানান, উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৫ শত ৯৮ জন পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে খামারে গবাদিপশু পালন করছেন। আর এ থেকে ৪৯ টি খামারে ৪১ হাজার ৮ শত ৩৬ টি গবাদিপশু উৎপাদিত হবে। যা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত। এবারও উপজেলা প্রশাসন অনুমদিত ১৪ টি ইউনিয়নে স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে বসছে ৩ টি পশুর হাট। তবে হাটগুলোতে বিশেষ তদারকি করছে ৫জন ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম।
খামারি মিনু সাহা বলেন, এবছর কোরবানিতে গরুর চাহিদা অনেক তবে গো-খাদ্যের দাম বেশি। তারপরেও আগের মতো গরুকে মোটাজাতা করণে খাদ্য দিয়ে থাকেন। দৈনিক একটি গরুর পিছনে ২/৩ শত টাকা মতো খাদ্যে খরচ হয়। বিক্রি যোগ্য এবারের প্রতিটি গরুর মূল্য প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১৬ লক্ষ টাকা।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ৮টা দেশী ও অস্ট্রেলিয়ার জাতের গরু রয়েছে। এখনো যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৮০ লক্ষ টাকা, বিগত বছর লোকসান হওয়াতে এবারও ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুঃচিন্তায় খামারি।
অন্যদিকে গরুর খামারি আমির হামজা বলেন, কিছুদিন আগে ৮টি গরু ছিলো সব বিক্রি করে এখনো বর্তমানে ৫ টি গরু রয়েছে তার খামারে এবার কোরবানিতে ৫০ হাজার টাকার মূল্যের ৩ টি গরুর বিক্রি করবেন।
খর্নিয়া পশুর হাটের ক্রেতা জুয়েল, মোঃ জামালসহ আরো অনেকে জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম দুই-তিন গুন বেশী চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
বিক্রেতা মোঃ নজরুলসহ অনেকেই বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেশী থাকায় গরু লালনপালনে তাদের খরচ বেশী হয়েছে। তাই গরুর দামও বেশী।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল কবির জানান, খামারিদের ও কৃষকদের উৎসাহ দিতে সরকারী প্রণোদনাসহ সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অফিস। অন্য দিকে বে-সরকারি প্রতিষ্টান পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) এর আরএমটিপি প্রকল্প আওতায় দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করতে ৪৯জন খামারিকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। এতে করে দিন দিন গরু পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সময় অসাধু কিছু ব্যবসায়ী গরু মোটাতাজা করতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোনজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতো। ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে পশু মোটাতাজাকরণের প্রবণতা এখন আর নেই বললেই চলে। তার পরেও ডুমুরিয়ায় ৫ জন করে ৩ টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম খামারে গিয়ে অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণ হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করছে।
Leave a Reply