টিয়ার গ্যাস, বোমা, গুলি, সেনা গাড়িতে হামলা—আতঙ্কে গোটা শহর; ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি এনসিপি’র
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে ফেরার পথে ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হয় দলের নেতাকর্মীরা। সদ্য নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ এনসিপি নেতাদের। সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ার গ্যাস, ইটপাটকেল, বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনায় গোটা গোপালগঞ্জ পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল ও নিহতদের পরিবার। নিহতরা হলেন দীপ্ত সাহা (২৫), পিতা সন্তোষ সাহা, আদয়ন রোড, গোপালগঞ্জ শহর, রমজান কাজী (১৮), কোটালিপাড়া, সোহেল রানা মোল্লা (৩০), টুঙ্গিপাড়া, ইমন তালুকদার (১৮), এছাড়া সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সহিংসতার পেছনে কারা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপালগঞ্জের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ঘটনার সূচনা হয় যখন বেদগ্রামের বাসিন্দা ও গোপালগঞ্জ মাছ বাজারের সাবেক ইজারাদার, মৃত সেলিম শেখের ছেলে ফেলা, নয়ন, শাওন এবং মাছ ব্যবসায়ী রহমত এনসিপি নেতাকর্মীদের উপর উস্কানিমূলক কথা বলেন। তখনই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। এর পরপরই সংঘর্ষ শুরু হয়।
তিনি আরও জানান, ফেলার বিরুদ্ধে ছাত্রজনতা হত্যার মামলা রয়েছে, এবং সংঘর্ষের সময় বেদগ্রামের অনেককেই হামলাকারীদের সঙ্গে থাকতে দেখা গেছে।
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমাবেশ শেষে খুলনায় ফেরার পথে তাদের গাড়ি বহরে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। উল্টো কিছু পুলিশ সদস্যকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলার সময় হামলাকারীদের সঙ্গে দেখা গেছে বলেও অভিযোগ উঠে।
টানা এক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে। গুলির শব্দ, টিয়ার গ্যাস আর বোমার বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ে।
পরে সেনা টহল জোরদার করা হয় এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের খুলনায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
এনসিপি’র হুঁশিয়ারি
এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, “এটা কোনো সাধারণ হামলা নয়, এটা পরিকল্পিত গণহত্যা। যারা হামলা চালিয়েছে তারা রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে দানবে পরিণত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে, না হলে এনসিপি দেশব্যাপী প্রতিরোধ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”
এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে আজ বিকেল ৪টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং আগামীকাল সারাদেশে কালো পতাকা মিছিলের ডাক দিয়েছে এনসিপি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো পক্ষকে আটক বা গ্রেপ্তারের তথ্য জানায়নি পুলিশ।
Leave a Reply