স্ত্রীর নামে বাড়ি, কিডনি দেওয়ার পর গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে প্রেম; সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের ছত্রছায়ায় প্রবাসী স্বামী তারেক রহমানকে চার মাসের কারাদণ্ড, চলছে সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময় সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল মানবিকতার এক গল্প—স্ত্রী স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে কিডনি দান করেছেন। কিন্তু আবেগঘন সেই কাহিনির পেছনে লুকিয়ে ছিল ভয়াবহ প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং সাবেক সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় সাজানো নিষ্ঠুর এক ষড়যন্ত্র।
ভুক্তভোগী তারেক রহমান একজন প্রবাসফেরত ব্যবসায়ী। সাভারের কলমা ১ নম্বর এলাকায় জীবনের সঞ্চয় দিয়ে নির্মাণ করেন একটি তিনতলা বাড়ি। ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে একটি ফ্লোর স্ত্রী সাবরিনা টুনির নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় একটি পুত্রসন্তান।
কিডনি দিয়ে জীবন, পরে প্রেম গড়ে ওঠে ভাড়াটিয়ার সঙ্গে
তারেক রহমানের কিডনি বিকল হয়ে পড়লে স্ত্রী টুনি কলকাতায় গিয়ে স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে কিডনি দান করেন। চিকিৎসা শেষে তারেক কিছুটা সুস্থ হলেও কর্মক্ষমতা হারান। সংসার চলতে থাকে বাড়ির ভাড়ার টাকায়।
এ সময়েই স্ত্রী টুনির ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে বাড়ির ভাড়াটিয়া এক গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে। বিষয়টি জানাজানি হলে বাধা দেন তারেক। এরপরই শুরু হয় তাঁর জীবনের ভয়াবহ ধ্বংসযাত্রা।
পরকীয়ার আড়ালে মামলা, প্রভাব খাটিয়ে সাজানো অভিযোগ
তারেকের দাবি, স্ত্রী টুনি ও তাঁর বোন সাবরিনা নিপা মিলে সাজান একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ—স্বামী নির্যাতন করেন, জুয়া খেলেন এবং পরনারীতে আসক্ত। যদিও এসবের কোনো প্রমাণ নেই, তথাপি সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ ও আদালতকে ‘ম্যানেজ’ করে তাকে চার মাস জেলে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ।
তারেক বলেন,
> “এম এ আউয়াল মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাটে থাকলেও মাঝে মাঝে গুলশানে নিপার বাসায় অবস্থান করতেন। দামী গাড়ি নিয়ে সাভারে টুনির সঙ্গে দেখা করতেও আসতেন। গুলশানের বাসার সব খরচও বহন করেন এম এ আউয়াল।”
নিপা নিজেকে একজন টিভি উপস্থাপিকা পরিচয়ে পরিচিত করেন এবং এমপি আউয়ালের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে বিভিন্ন মহলে নিজেকে তুলে ধরেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় চরিত্রহননের অভিযান
জামিনে মুক্তির পর তারেক লক্ষ্য করেন, সামাজিক মাধ্যমে স্ত্রী টুনি ও তাঁর বোন নিপা নতুন করে তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রচারের নির্দেশ দেন এমপি আউয়াল নিজেই।
তারেক বলেন,
> “ওরা আমার জীবনের সব শেষ করে দিয়েছে। এখন আমি অসুস্থ, নিঃস্ব, সন্তানবিচ্ছিন্ন—বাড়িতে ফিরতেও ভয় লাগে।”
সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল আওয়ামী লীগের সময় সংসদ সদস্য ছিলেন। এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জমি দখল, জাল কাগজ তৈরি, প্রতারণা ও হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। পল্লবীর আলীনগর এলাকায় একই জমি একাধিকবার বিক্রি, রাষ্ট্রীয় জমি দখল করে আবার বাউন্ডারি নির্মাণ, এমনকি শিশু সন্তানের সামনে পিতাকে হত্যার ঘটনায় তাঁর নাম উঠে আসে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে।
ভাই ও প্রতিবেশীদের বক্তব্য
তারেকের ভাই বলেন,
> “ভাবি ও তাঁর বোন জানেন ভাই আর বেশিদিন বাঁচবে না। এখন থেকেই নাটক সাজিয়ে সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টা করছে। আমরা গেলে বাসা থেকে গালাগালি করে বের করে দেয়।” তাই এখন আশা যাওয়া করিনা।
প্রতিবেশীরা বলেন,
> “তারেক ভাই শান্ত-ভালো মানুষ। অসুস্থ হয়ে ঘরেই থাকেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী প্রতিদিন গার্মেন্টস ছেলের সঙ্গে দেখা করেন—নিজেদের চোখেই দেখেছি। এখন তারা সব দোষ তারেকের ওপর চাপাচ্ছে।”
রাষ্ট্রের নীরবতা, সমাজের প্রশ্ন
এখন প্রশ্ন উঠেছে—কিডনি দান করে একদিকে মানবিকতার গল্প, অন্যদিকে সেই সম্পর্কেই ষড়যন্ত্রের ফাঁদ? সাবেক সংসদ সদস্যের প্রভাব, মিডিয়া পরিচয়ের অপব্যবহার ও মিথ্যা মামলার শিকার আর কত পরিবার হবে?
তারেক রহমান বলেন,
> “আমি কারও শাস্তি চাই না। শুধু চাই, রাষ্ট্র সত্যটা জানুক। মুখোশ খুলে যাক যারা সাধারণ মানুষের জীবন শেষ করে দেয়। হয়তো আমার সময় কম, কিন্তু চাই, কেউ যেন এমন ফাঁদে না পড়ে।”
টুনির বক্তব্য ও এমপি আউয়ালের নিরবতা
টুনি বলেন,
> “আমি সব করেছি, কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসেনি। তাই মামলা করেছি। এখন সে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।”
আপনার বোন নিপার সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক কী? এমন প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে টুনি বলেন,
> “এটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর তারা স্বামী-স্ত্রী, তাই এক বাসায় থাকেন।” পরে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও এমপি এম এ আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কলাবাগানের অফিসেও পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করেও কোনো উত্তর মেলেনি।
সুশীল সমাজের লোকজন বলছেন:
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়—এটি রাষ্ট্র, সমাজ ও বিচারব্যবস্থার সামনে একটি আয়না। এখন দেখার পালা—রাষ্ট্র কি মুখোশ খুলবে, নাকি আবারও নিরব থাকবে?
Leave a Reply