মনিরুজ্জামান মনির: এশা’র বয়স সবে সাত। আগামী জুন মাসে আট বছরে পা দেবে। বয়সের তুলনায় মেয়েটা একটু বেশি ট্যালেন্ট , একটু বেশি পাকা। পাকা বলতে একটু বেশি চালাক চতুর আর কি ! কালের বিবর্তনে মানুষ চালাক হচ্ছে। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এশা’র কাছে একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হল। সে কথায়- কথায় বলে, মা বলেছেন তাই!
এশা রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। পাখি ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙ্গে তার। দাঁত ব্রাশ করে। এরপর উত্তম রূপে অজু করে ফজরের নামাজ পড়ে। সকাল বেলার নাস্তা সেরে পড়তে বসে। সময় মত স্কুলে যায়। খাবার খাওয়ার আগে হাত মুখ ধুয়ে খাবার খায়। খাবার খাওয়ার পরে সুন্দর করে হাত মুখ পরিষ্কার করে। নিজের ব্যবহারের জিনিসপত্র নিজে পরিষ্কার করে। টয়লেট থেকে ফিরে এসে দুই হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে। অজু করে পাক – পবিত্র হয়।
তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে ফেলে। প্রত্যেক শুক্রবারে হাত ও পায়ের নখ ছাটে। এশা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মত আদায় করে। দিনে দু’বার দাঁত ব্রাশ করে। তিন বেলা খাবার খায়। বিকেল বেলা খেলা ধুলা করে। সন্ধ্যার আগেই সোজা ঘরে। ঘরে ওঠার আগে হাত পা ধুয়ে পাপোসে পা মুছে পড়ার টেবিলে যায়।
এশা’র আরো কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য আছে। সে মিষ্টি স্বরে কথা বলে । গৃহপালিত পশুপাখিকে আদর করে , বড়দেরকে ভীষণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান করে।
এশা’র নানা এসেছেন তাই- আজ এশা ভীষণ খুশি। এশা’র স্বজন প্রীতিটাও একটু বেশি । তাই এশা যত্ন সহকারে নানার দেখভাল করতে লাগলো। ছোট্ট নাতনির আতিথেয়তায় নানা মুগ্ধ না হয়ে পারলো না। এবার নানা নাতনি কে বলল-
— এশা চল ভাই দোকানে যাই।
— কেন? নানা।
— তোকে আজ প্রাণ ফ্রুটো খাওয়াবো।
— না ,নানা। পড়া আছে।
— পরে পড়ে নিস।
মা বলেছেন, সময়ের কাজ সময় মত করা বুদ্ধিমানের কাজ। কথার ফাঁকে -ফাঁকে এশা পড়তে থাকে।
ব্যা -ব্যা ব্লাক সিপ্
হ্যাভ ইউ এনি উল।
ইয়েস স্যার ইয়েস স্যার
থ্রি ব্যাংগস ফুল।
তার পরে পড়ে।
আই লাভ মাই কান্ট্রি
আই লাভ মাই মাদার ।
আই লাইক টু স্টাডি
ফর হেলপ আদার।
এবার পড়া শুরু করলো –
আই ইট রাইস -আমি ভাত খাই।
আই ড্রিংক মিল্ক-আমি দুধ পান করি।
আই হ্যাভ এ পেন- আমার একটি কলম আছে।
এ থেকে বোঝা যায় এশা’র ইংরেজির প্রতি ঝোঁক একটু বেশি। এশা’র নানা একবার বলে উঠলো।
— কি খাবি আমাকে বল আমি এনে দেই।
জুস নাকি জেলি?
— মা বলেছেন টাটকা ফল খেতে । ফলের জুসে কেমিক্যাল দেয়া থাকে। এসব অস্বাস্থ্যকর ।এগুলো খাওয়া ঠিক না।
— আজ তোর কাছ থেকে শিক্ষা নেবো। বল বুবু আর কি কি খাওয়া ঠিক না?
— বাইরের খোলা খাবার। এই যেমন রাস্তার পাশের আচার ,মটকা, ছোলা , বুন্দিয়া, চটপটি, ফুচকা ইত্যাদি।
— আর কিছু?
— আরো আছে, বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ফলেই ফরমালিন দেওয়া থাকে। তাই আমাদের বাগানের ফল ছাড়া বাজারের ফল খাই না।
— আর কি?
— মাছের বেলায়ও তাই। আমরা আমাদের পুকুরের মাছ খাই।
—আর!
— আইসক্রিম খাই না। ঠান্ডা লাগতে পারে । ঠান্ডা থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে।
— বুবু তুমি এত কিছু জানো কি করে?
— মা বলেছেন।
বুবু, বলোতো এটা কত টাকার নোট।
—কেন ?পঞ্চাশ …. …।
—এটা তুমি রেখে দাও।
—মা বলেছেন, কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা নিতে হয় না। টাকা নিলে, টাকা পয়সা প্রতি লোভ এসে যায়। আমি ছোট মানুষ আমার এত টাকার প্রয়োজন হয় না ।আমি প্রতিদিন এক প্যাকেট মিল্ক ক্লাস বিস্কুট খাই তাও বাবা এনে দেয়।
গত পরশুদিন মেঝ কাকা আমাকে একশো টাকা দিতে চেয়েছিলেন। আমি নেইনি । মা চুপ ছিলেন। বাবা বললেন, এশা টাকাটা নাও। কিন্তু বাবার চোখে পানি ছিলো । বল নানা, বাবা কাঁদলে সেই টাকা কি নেওয়া যায় ? আচ্ছা নানা, বাবা কাঁদলো কেন ? মেঝ কাকার অনেক টাকা। আর আমাদের টাকা নাই সেজন্য। আমি তো টাকা চাই না।
গতকাল মা বলেছেন, তোর বাবা বেকার একটু হিসেব করে চলতে হবে । তাই কাল থেকে দশ টাকার মিল্ক প্লাসের পরিবর্তে পাঁচ টাকার এনার্জি প্লাস বিস্কুট খাই। মেঝ কাকার মেয়েরা খুব সুন্দর – সুন্দর পোশাক পরে। আমার বাবাও আমাকে দামি পোশাক দিতে চায়। আপুদের সাথে পাল্লা দিয়ে কি আমাদের চলে। সবার সাথে তাল মিলাতে গেলে বাবার খুব কষ্ট হবে। তাই না নানা?
—হ্যাঁ বুবু , তোর তো অনেক বুদ্ধি।
—এ বুদ্ধি আমার না।
— তবে কার ?
— মা আমাকে সবকিছু
শিখায় ।আর মা’র বুদ্ধি গুলো আমার কাছে চলে আসে।
— বুবু , তুই বড় হয়ে কি হতে চাস?
— মা বলেছেন , ডাক্তার হলে মানুষের সেবা করা যায় । তাই আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।
নানা বললেন, তুই ডাক্তার হতে পারবি কী না জানি না। তবে তুই বড় হয়ে বড় কিছু হবি এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
Leave a Reply