বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি: আসন্ন ত্রায়াদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আইএবি)-এর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চরমোনাই পীর পরিবারের শীর্ষস্থানীয় আলেম মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগণের মধ্যে শায়খে চরমোনাইকে প্রার্থী হিসেবে দেখার একটি মৌন আকাঙ্ক্ষা ছিল — অবশেষে সেটি পূরণ হওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে স্বস্তি ও আশা দুটোই স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।বাকেরগঞ্জ উপজেলা রাজনৈতিকভাবে বরিশাল অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা হিসেবে পরিচিত। নানা সময়ে নানা রাজনৈতিক দলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাঠ হলেও এখানকার জনগোষ্ঠী ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি সবসময়ই আস্থাশীল। স্থানীয়দের ভাষায়,বাকেরগঞ্জের মানুষ সবসময়ই চায় ন্যায়নিষ্ঠ, শিক্ষিত ও আল্লাহভীরু নেতৃত্ব সেই শূন্যতাই এবার পূরণ হতে চলেছে।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের দীর্ঘ আলোচনার পর এ আসনে হাতপাখা প্রতীকের জন্য শায়খে চরমোনাইকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মতে, এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক। তাদের ভাষ্য, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনটি বহুদিন ধরেই ইসলামী আন্দোলনের জন্য সম্ভাবনাময় আসন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। তবে এবার মাঠে নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু হওয়ায় জনমত সুসংগঠিত করতে সুবিধা হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।একজন স্থানীয় শিক্ষক জানান,শায়খে চরমোনাই আমাদের জন্য শুধু একজন প্রার্থী নয়, আমাদের চেতনার প্রতীক। তাঁর মতো একজন আলেমের সংসদে যাওয়া মানে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা শক্তিশালী হওয়া।বাজারে-ঘাটে, চায়ের দোকানে বা মসজিদের বারান্দায় এ নিয়ে সরগরম আলোচনা চলছে। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে বাকেরগঞ্জ থেকে হাতপাখার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে এ ক্ষেত্রেও অনেকে শঙ্কার কথা বলছেন বহিরাগত প্রার্থী কিংবানবিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার আশঙ্কা থাকায় নেতাকর্মীরা সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলনের স্থানীয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের শাখাগুলোতে সাংগঠনিক সভা ও জনসংযোগ শুরু হয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে ‘হাতপাখা প্রতীক’-কে সামনে রেখে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমর্থন চাওয়ার কৌশল ঠিক করা হয়েছে।এক প্রবীণ মুরুব্বি বলেন,আমরা বহুকাল ধরে চেয়ে আসছি আমাদের অঞ্চলের মানুষ যেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার মতো একজন যোগ্য মানুষ পায়। শায়খে চরমোনাইকে আমরা সেই জায়গায়ই দেখতে চাই।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, গুজব বা প্রলোভনে বিভ্রান্ত না হয়ে সব কর্মী-সমর্থককে মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রকার সহিংসতা বা উস্কানি থেকে বিরত থাকার দিকেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চরমোনাই পীর পরিবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী হলেও সরাসরি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বিরল। এবার শায়খে চরমোনাই-এর সরাসরি প্রার্থী হওয়া একদিকে যেমন দলীয় সমর্থকদের উদ্দীপিত করেছে,অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও নতুন করে মাঠগোছানোর চিন্তায় ফেলেছে।অন্যদিকে সাধারণ ভোটাররা চান, নির্বাচনী মাঠে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন যেন নির্ভয়ে ও সুষ্ঠুভাবে ঘটে। এলাকার তরুণদের ভাষায়,পুরনো ধারা আর চাই না। এবার হাতপাখার শীতল বাতাসেই শান্তি খুঁজতে চাই।সব মিলিয়ে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনকে ঘিরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মনোনয়ন নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ না জাগিয়ে বরং এলাকার মানুষকে দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
Leave a Reply