মীর হোসেন মোল্লাঃ গুগলে আমরা কত কিছুই না করি। নির্দিষ্ট বিষয়ে সার্চ করে ওয়েবসাইট ভিজিট করি, তথ্য সংগ্রহ করি। আবার জিমেইল, গুগল ড্রাইভের মত তাঁদের ইকোসিস্টেমের অনেক সার্ভিসও আমরা নিয়মিত ব্যবহার করে থাকি। এর সবগুলো কি ট্র্যাক করা সম্ভব- অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হচ্ছে গুগল সেগুলো ট্র্যাক করে কিনা, অর্থাৎ আমরা ইন্টারনেটে যা করি সেগুলোর হিসেব গুগল রাখে কিনা। আপনার পছন্দ না হলেও উত্তর হচ্ছে, গুগলে আমরা যা-ই করি না কেন, সেগুলো সব ট্র্যাক করে থাকে এই সার্চ ইঞ্জিনটি। আমার-আপনার এই সব ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবহার করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপার্জনও করে থাকে।
সম্প্রতি (১৮ ডিসেম্বর) গুগল তাঁদের আপডেটেড প্ল্যাটফর্ম প্রোগ্রামে জানিয়েছে যে, তাঁরা ডেটা সংগ্রহের পুরাতন একটি প্রক্রিয়া আবারও ফিরিয়ে এনেছে যেখানে ব্যবহারকারীদের আইপি অ্যাড্রেস থেকে শুরু করে ব্রাউজিং ডেটা ও ব্যবহৃত ডিভাইস সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি ‘ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টিং’ নামেও পরিচিত।
গুগলের নতুন আপডেটেড প্রোগ্রামে তাঁদের বিজ্ঞাপনের ইকোসিস্টেমে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এই যেমন বিভিন্ন ডিভাইসে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেওয়াসহ বিজ্ঞাপনদাতাদের উপর বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। অবশ্য গুগল বলছে, তাঁদের এই আপডেটেড নীতিমালায় ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার্থে উন্নত সব প্রাইভেসি-এনহ্যান্সিং টেকনোলজি (পিইটি) ব্যবহার করা হয়েছে।
ব্যবহারকারীদের পছন্দ-অপছন্দ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়ে গুগল তাঁদের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখন যে উলটো পথে চলছে সেটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বিস্তর। গুগল তাঁদের আপডেটেড প্ল্যাটফর্ম প্রোগ্রাম প্রকাশের এক দিন পরই যুক্তরাজ্যের ডেটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইনফরমেশন কমিশনার’স অফিস’ (আইসিও) এই সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মতে, পুনরায় ‘ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টিং’ প্রক্রিয়ায় ডেটা সংগ্রহের যে সিদ্ধান্ত গুগল নিয়েছে সেটি পুরোপুরি অনৈতিক। এভাবে ব্যবহারকারীদের পছন্দ-অপছন্দ, তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণ করার কোনো অধিকার গুগলের নেই। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন কাজ করতে বিজ্ঞাপনদাতারা উৎসাহিত হবে বলে সাবধানও করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
তবে গুগলের যুক্তি হচ্ছে, প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তিত নীতিমালায় যে প্রযুক্তি ব্যবহারহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলো ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য যথেষ্ট এবং একই সাথে ব্র্যান্ডগুলোর জন্য তাঁদের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছনোর নতুন পথ তৈরি করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, আপডেটেড এই ফিচারটি বিজ্ঞাপনদাতারা আগামি ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির যত আবির্ভাব হচ্ছে ততই যেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও ডেটা সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয় উঠছে। প্রযুক্তি জগতের অনেক প্রতিষ্ঠানকেই উপার্জনের জন্য টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো প্রায়শই তাঁদের গুরুত্বের তালিকায় নিচের দিকে নেমে যায়। তথ্যসূত্র: গুগল সাপোর্ট, ম্যাশেবল
Leave a Reply