রাসেল আদিত্য,স্পোর্টস ডেস্ক।।
পর্তুগালের ফুটবল সংস্কৃতি ও ইতিহাস অনেক পুরোনো।তারপরও সেটিকে এখন পরিষ্কার ভগ করা যায় রোনালদো পূর্ব ও রোনালদো যুগ হিসেবে।তার আবির্ভাবের আগে কোনোদিন বড় কোনো আসরের সেমিফাইনালেও খেলতে পারেনি পর্তুগাল।আর রোনালদোর হাত ধরে সেই পর্তুগালই একটি ইউরো ও দুটি নেশন্স কাপ জিতে নিল।হয়ে উঠলো সমিহ জাগানিয়া দল,বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনাল খেলল মোট চারবার।আর প্রতিটিতেই ছিল রোনালদোর গোল!
মিউনিখে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গোলেই জার্মানীকে স্তব্ধ করে দিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে পর্তুগাল।গতরাতের ফাইনালেও রোনালদো ত্রাতা হয়ে এলেন অসময়ে।তখন ২-১ গোলে পিছিয়ে পর্তুগাল।৬১ মিনিটে গোলের উৎস ছিল নুনো মেন্দেজের ক্রস।বাঁ প্রান্ত দিয়ে উঠে এসে বারবার স্প্যানিশ রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত রাখা মেন্দেজের নেওয়া ক্রসটি স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে একটু দিক বদলে চলে যায় ওঁত পেতে থাকা রোনালদোর কাছে।আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৩৮তম গোলটি করতে ভুল করেননি ক্রিশ্চিয়ানো
রোনালদো।
পাল্টাপাল্টি আক্রমণের পসরা সাঁজানো অসাধারণ এই ফাইনাল ম্যাচ ২–২ গোলে সমতায় থেকে গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে।তখনও আর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।আর টাইব্রেকারে স্নায়ুর পরীক্ষায় উতরে গিয়ে ৫–৩ গোলে স্পেনকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতে ওঠে পর্তুগাল।২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে নেশনস লিগের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পর্তুগিজরা।প্রথম দল হিসেবে একাধিকবার উয়েফা নেশনস লিগ জিতল পর্তুগাল।
এর আগে মার্তিন জুবিমেন্দির গোলে ম্যাচের ২১ মিনিটেই এগিয়ে দিয়েছিলো আগের বারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন।সমতায় ফিরতে ৫ মিনিট সময় নেয় পর্তুগিজরা।পর্তুগালের ফুলব্যাক নুনো মেন্দেজ সমতায় ফেরান দলকে।যে গোলের উৎস মূলে ছিলেন রোনালদো।
প্রথমার্ধের খেলা শেষ হওয়ার ঠিক আগে মাঝমাঠ থেকে পেদ্রির দুর্দান্ত পাসে গোলমুখে বল পেয়ে মিকেল ওইয়ারসাবাল ২–১ গোলে স্পেনকে এগিয়ে দিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।তারপর ৬১ মিনিটে রোনালদোর গোলের কথাতো আগেই জানিয়েছি।
অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট পর্তুগালকে খেলতে হয়েছে অধিনায়ক রোনালদোকে ছাড়াই।ম্যাচের ৮৮ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু তিনি ক্রিশ্চিয়ানো,মাঠে না থেকেও চিৎকার করে বিভিন্ন খেলোয়াড়কে গাইড করেছেন।দুই দলই একটু বেশি সতর্ক ফুটবল খেলায় গোল আর হয়নি।ম্যাচ গড়ায় ট্রাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে আগে শট নেওয়া পর্তুগালের হয়ে গোল করেছেন গনসালো রামোস, ভিতিনিয়া, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, নুনো মেন্দেজ ও রুবেন নেভেস।আর স্পেনের হয়ে প্রথম তিন শটে গোল করেন মিকেল মেরিনো, অ্যালেক্স বায়েনা ও ইসকো।কিন্তু আলভারো মোরাতার নেওয়া চতুর্থ শটটি ফিরিয়ে দেন পর্তুগাল গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তা।এরপর নেভেস পঞ্চম শটে গোল করতেই নিশ্চিত হয়ে যায় পর্তুগালের জয়।
সতীর্থরা যখন বাঁধনহারা উদযাপনে ছুটোছুটি করছেন মাঠজুড়ে,ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তখন কাঁদছেন।হাঁটু গেড়ে মাঠে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।কেউ একজন চেষ্টা করলেন তাকে টেনে তুলতে।কিন্তু তিনি তখন যেন অন্য জগতে।নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছেন সময়ের হাতে!আগে বহুবার রোনালদোর কান্না দেখেছে ফুটবল বিশ্ব।কিন্তু গতরাতের কান্না ছিলো ভিন্ন।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন নিঃসন্দেহে পর্তুগালের ফুলব্যাক নুনো মেন্দেজ।তাছাড়া ট্রাইব্রেকারে আলভারো মোরাতার শট আটকে দিয়ে ও ম্যাচে কয়েকটি ভালো সেভ করে গোলরক্ষক দিয়াগো কস্তারও অবদান কম নয় শিরোপা জয়ের নেপথ্যে।কিন্তু পৃথিবীর সকল মিডিয়ার সকল আলো কেড়ে নিলেন বুড়ো রোনালদো।কেনোই নেবেন না?আসরের ৯ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন,গোল করিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনাল,সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করেছেন দল যখন খাদের কিনারায়, সেই সময়ে।এই ৪০ বছর বয়সে এমন পারফরম্যান্স তো প্রায় অবিশ্বাস্য!
ম্যাচ শেষে মিডিয়াকে জানালেন,“কী আনন্দ! এই প্রজন্মের জন্য এটা জরুরি ছিল,এই মানের একটি ট্রফি যাদের প্রাপ্য।আমাদের পরিবারের জন্যও। আমার বাচ্চারা এসেছে এখানে, আমার স্ত্রী, ভাই, বন্ধুরা এসেছে”।
“এই অনুভূতিই বিশেষ কিছু।এই প্রজন্মের অধিনায়ক হতে পারা দারুণ গর্ব ও সম্মানের। জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা জিততে পারা মানে সবসময়ই প্রাপ্তির চূড়াকে ছোঁয়া।”
সত্যিই এই আসরের গল্পের নায়ক একজনই।তিনি
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
Leave a Reply