কিলিয়ান এমবাপ্পে ঝলকে নেশন্স লিগে তৃতীয় হলো ফ্রান্স,পুরো ম্যাচে ভালো খেলেও হারলো জার্মানী
রাসেল আদিত্য,স্পোর্টস ডেস্ক।।
মিউনিখের পর স্টুটগার্ট,শহর ও মাঠ বদলালেও বদলায়নি স্বাগতিক জার্মানীর ভাগ্য।দুই ম্যাচেই প্রায় একই চিত্রনাট্য।ভালো ফুটবল খেলেও হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁদের।নিজেদের মাঠে ২০২৩ সালের পর টানা দুই ম্যাচে পরাজিত হলো তাঁরা।
গোলের খেলা ফুটবলে আলোচ্য দুই ম্যাচেই দুই তারকা ফুটবলার গেমচেন্জার রুপে আবির্ভূত হয়ে ম্যাচ নিজেদের পক্ষে নিয়ে হতাশায় ডুবিয়ে দেন জার্মানীকে।মিউনিখের সেমিফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোল করে ম্যাচ উইনার, আর ৭ জুন তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে গোল করে ও গোল করিয়ে ম্যাচ উইনার কিলিয়ান এমবাপ্পে।
রেকর্ড বলবে,এমএইচপি আরেনায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফ্রান্স উয়েফা নেশনস লিগের(২০২৪/২৫) ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে।ফুটবল এমনই।গোলটাকেই মনে রাখে রেকর্ড,ইতিহাস সবাই।জার্মানরা ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রেখে,গোল করে ও পেনাল্টি পেয়েও প্রযুক্তির কল্যানে বঞ্চিত হওয়ার কথা রেকর্ড বলবেনা।বলবেনা খেলা শুরুর পর পরই আক্রমণের ঝড় তুলে দিয়ে ফ্রান্সকে তটস্থ করে রাখার কথা।রেকর্ড বলবেনা,প্রথম পাঁচ মিনিটেই ছয়টি শট নেওয়া জার্মানীর দূর্দান্ত পারফরম্যান্সের কথা।
এই ধরনের আসরে কোনও দলই ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচ খেলার লক্ষ্য নিয়ে আসেনা।তবে আগের ম্যাচে ভরা গ্যালারী ও দেশবাসীকে শেষ পর্যন্ত হতাশ করা জার্মানী এই তৃতীয় স্থানের ম্যাচের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে অন্ততঃ দেশবাসীকে স্বান্তনা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।কিন্তু ভাগ্য তাঁদের পক্ষে ছিলোনা।
তাইতো শুরুর দ্বিতীয় মিনিটেই মাইক মাইনানকে পরাস্ত করলেও নিক ওল্ডমেটের শট গোললাইন থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে আটকে দেন ডিফেন্ডার লুক হার্নান্দেজ।পরের মিনিটেও নিকোলাস ফুলক্রুগকে হতাশ করে গোলে ঢোকার মূহুর্তে ডাইভিং হেডে বল ক্লিয়ার করেন লুকাস ডিগনে।দুইবারই গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেও দূর্ভাগ্যকে পারেনি জার্মানরা।
এরপর পুরো ম্যাচ জুড়েই একের পর এক এহেন দূর্ভাগ্যের দৃশ্য চিত্রায়িত হলো।৩৩ মিনিটে করিম আদেয়েমিকে বক্সের ভেতর বিপদজনক ভাবে ফরাসি গোলরক্ষক মাইনান ফেলে দিলে পেনাল্টি দেওয়া রেফারি ফ্রান্সের আপত্তিতে দীর্ঘ সময় ধরে ভিএআর যাচাই করে পেনাল্টি বাতিল করে উল্টো আদেয়েমিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ডাইভ দেওয়ার জন্য হলুদ কার্ড দেখান।অথচ রিপ্লেতে বারবার দেখাচ্ছিলো,পেনাল্টি ন্যায্য ছিলো।
পরের মিনিটে তথা ৩৪ মিনিটে ম্যাচে প্রথমবার আক্রমণে ওঠে ফ্রান্স।প্রথম প্রাপ্ত কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে দারুণ হেড করেও জার্মান গোলরক্ষক আন্দ্রে টের স্টেগেন অসামান্য ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দিলে গোল পাওয়া হয়নি ফ্রান্সের।
৪০ মিনিটে আরেকবার দূর্ভাগ্য আটকে দেয় জার্মানীকে।ফ্লোরিয়ান উইর্টজের তীব্র গতির শট পোষ্টে লেগে ফিরে আসে।৪৫ মিনিটে তারকা ক্যারিশমায় এগিয়ে যায় ফ্রান্স।একটি পাল্টা আক্রমণ থেকে চৌমেনির ক্রস খুঁজে নেয় জার্মানীর বক্সে ঢুকে পড়া এমবাপ্পেকে।জটলার ভেতর থেকে নেওয়া এমবাপ্পের শট দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়।১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।মজার বিষয় হলো প্রথমার্ধে ওটাই ছিলো এমবাপ্পের প্রথম মুভ।
নিক ওল্ডমেটের জায়গায় ডেনিজ উনদাভকে নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামা জার্মানী সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে।৫৩ মিনিটে ডেনিজ উনদাভ গোল করে উদযাপনে যখন জার্মানরা, ভিএআর যাচাই করে রেফারি গোল বাতিল করে দেন,গোল করার আগে বলের আশেপাশে না থাকা ফুলক্রুগের অজান্তে দেওয়া ধাক্কায় আদ্রিয়ান পড়ে যান আর ভিআরএতে এটি রেফারির কাছে ফাউল হিসেবে গন্য হয়।
নাগলসম্যানের এই জার্মান দলে সেই অর্থে কোন তারকা না থাকলেও দলের সবাই মিলে ফ্রান্সকে চেপে ধরে বারবার আক্রমণে উঠেছে।একপর্যায়ে এমবাপ্পেকেও রক্ষন সামলাতে দেখা যায়।সবই করেছে জার্মানী,গোলটাই পায়নি শুধু।
উল্টো ৮৪ মিনিটে রক্ষন সামলাতে বিরক্ত এমবাপ্পে পাল্টা আক্রমণে ওঠেন।জার্মানীর প্রায় সবাই তখন উপরে উঠে এসেছিলো,সেই সুযোগটা নেন এমবাপ্পে।দ্রুত গতিতে বল নিয়ে জার্মান সীমানায় ঢুকে পড়েন,তিনি শট নিলেও হয়তো একা থাকা স্টেগেন তা আটকাতে পারতেন না।কিন্তু তারকা এমবাপ্পে ডানপাশে ওলিসকে উঠে আসতে দেখে শতভাগ নিশ্চিত গোলের জন্য বলটি ওলিসকে বাড়ান।ওলিসের পক্ষে সেই পাস থেকে গোল করা ভিন্ন কোন উপায় ছিলোনা।২-০ তে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।কোচ দিদিয়ের দেশম বাঁধ ভাঙা উদযাপনে মেতে ওঠেন।
অভিজ্ঞ দেশম তখনই বুঝে গিয়েছিলেন,দিনটি কেবলই তাঁদের।জার্মানী আর সমতায় ফিরতে পারবেনা।সেটি তারা পারেওনি।তাই ২-০ ব্যবধানেই ম্যাচ শেষ হয়।২০২০/২১ সালের নেশনস লিগের শিরোপা জেতার পর এবার তৃতীয় হয়ে শেষ করলো।
Leave a Reply