শাহজাহান আলী মনন সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুর সহ আশেপাশের এলাকায় গত ৪ দিন ধরে প্রখর রোদ আর তীব্র তাপদাহ বিরাজ করছে। দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যাপক সূর্য কিরণ থাকায় চারপাশ যেন আগুনে পুড়ছে। রাতেও গরমের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। ফলে জনজীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষজন। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগী নিয়ে চরম দূরাবস্থা।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বেলা ৩টায় তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রের্কড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। গতকাল বুধবারও ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচন্ড গরমে হাসফাস অবস্থা। মানুষ স্বস্তি পেতে বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
শ্রমজীবীদের জীবিকার তাগিদে প্রখর তাপদাহ সহ্য করে তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে হচ্ছে। অন্যান্যরা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমের কারণে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
দুপুর ২টার পর শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রচন্ড গরমে শহরের ব্যস্ত জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহনসহ মানুষের চলাচল সামান্য। কাজের প্রয়োজনে যারা বেরিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছাতা বা মাথায় গামছা ব্যবহার করছেন। মার্কেটগুলোতে ক্রেতা নেই বললেই চলে।
শহরের তামান্না সিনেমা হল মোড়ে কথা হয় রিক্সাচালক আবজারের সাথে। তিনি বলেন, কড়া রোদের কারণে ঘামে জামাকাপড় ভিজে যাচ্ছে। গরমে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। দুই-তিনবারের বেশী ভাড়া মারা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে। রিকশা না চালালে পেটে ভাত জুটবে না।
শুধু তিনিই নয়, তাঁর মতো তীব্র গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অটো-চালক থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষসহ পথচারীরা। এমনকি গরমে প্রাণীকুলও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রাস্তার কুকুরগুলোও ঘুরাঘুরি না করে ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করছে। কাকদেরও আনাগোনা স্বাভাবিক দিনের মতো নয়।
তবে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে বৃটিশ আমলের রেলওয়ের বিশালাকৃতির রেইনট্রি গাছের নিচে ব্যাপক জন সমাগম ঘটেছে। এখানে রিক্সাস্ট্যান্ডে সারি সারি রিকশায় ক্লান্ত, শ্রান্ত চালকরা যেমন অলস বসে আছে। তেমনি পাশের সরবতের দোকানগুলোতে তৃষ্ণার্ত মানুষের ভীড়। একই সাথে সাধারণ মানুষেরাও গাছের যায়ায় দুদন্ড জিড়িয়ে নিচ্ছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম জানান, উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সৈয়দপুর অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়ারসের উর্ধ্বে ওঠা নামা করছে। এ অবস্থায় চলমান তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন থাকতে পারে।
গরম থেকে স্বস্তি পেতে মানুষ গাছের ছাঁয়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে শরবত পান করে ক্লান্তি দুর করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন বয়সী মানুষজন গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে বিনোদন কেন্দ্রের সুইমিংপুলে ভীড় জমাচ্ছেন। এ সুযোগে সুইমিং পুলের সংশ্লিষ্টরা সেখানকার টিকিটের মূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে প্রখর তাপমাত্রার প্রভাবে গ্রামাঞ্চলে শাক-সবজি আবাদেও ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। চলমান তাপদাহে কৃষি শ্রমিকসহ দিন মজুরদের কাজ করা কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিং জনজীবনকে হাঁসফাঁস অবস্থায় ফেলেছে।
অপরদিকে তীব্র গরমের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরকারী হাসপাতাল ও বেসরকারী ক্লিনিকগুলিতে ভীড় বেড়েছে। এদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশী। স্থানীয় ১০০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৮০-৯০ জন চিকিৎসা নিলেও গত ৩-৪ দিন থেকে তা বেড়ে দাড়িয়েছে কয়েকগুন। বেশীর ভাগ রোগীই জ্বর-ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
তবে অনেক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে রোগী ভর্তি হলেও তেমন সেবা মিলছে না। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে আসা সবধরনের রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
(ছবি আছে)
শাহজাহান আলী মনন
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
মোবাইল -০১৩০৩৬৯২২২৭
তারিখ -১২/০৬/২০২৫ ইং
Leave a Reply