ঢাকার কথাঃ আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে এ দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনো আগামী নির্বাচনকে ঘিরে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা না গেলেও, থেমে নেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা। চৌদ্দগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ কামরুল হুদা। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চমক দেখিয়ে বিজয় অর্জন করবে বলে মনে করছেন সর্বশ্রেনীর লোকজন। পাশাপাশি জামায়াত ইসলামীর নায়েবের আমীর ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরও এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন বলে জানা গেছে। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট থেকে তিনি মোটেও বঞ্চিত হবেন না। তবে দলীয় ব্যানারের বাহিরে তার জনসমর্থন তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, জনপ্রিয়তার দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা কামরুল হুদার কাছে জামায়াত নেতা ডাঃ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরের ছোট ভাই হারুন ওরফে ছোট সাহেব নামে খ্যাত তাহের বাহিনী- প্রতিনিয়ত বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে আসতো। সাংসদ থাকাকালীন বিরোধী ও বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার এবং নির্যাতনের স্ট্রীম রুলার চালিয়েছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর আবারো বেপরোয়া হয়ে ছোট সাহেব হারুন গংরা চৌদ্দগ্রামে বিভিন্ন হাট বাজারে টেম্পু, বাস স্ট্যান্ড এবং সিএনজি স্ট্যান্ড দখল করে নিয়েছেন। যার ফলে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার সাধারণ মানুষের মাঝে ডাঃ তাহেরের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ইতিমধ্যে ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের নিজ দলের বাহিরে, জনপ্রিয়তার দিক থেকে সাধারন মানুষের কাছে শূন্যের কোঠায় অবস্থান করছেন বলে সূত্র জানিয়েছেন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার রাজনৈতিক খবরাখবর জানতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চাঁদাবাজি- দখলদারিত্বের বিরুদ্ধ কোন পদক্ষেপ না নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের কতেক ব্যক্তিদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে জামায়াত ইসলামী। আওয়ামী লীগের দোসরদের অর্থ এবং ভোটের লোভ সামলাতে না পেরে, জামায়াতের নেতারা ইতিমধ্যে অন্তরালে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের কতেক নেতাকে দূরে সরিয়ে রেখে, তাদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানাগেছে , উপজেলার মুন্সীরহাট সহ বিভিন্ন হাট বাজারের স্কুল মসজিদ মাদ্রাসা এবং সিএনজি ও ব্যাটারী দ্বারা চালিত অটো রিক্সার স্ট্যান্ড জামায়াত নেতারা ইতিমধ্যে তাদের দখলে নিয়ে গেছেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনআমলে আত্মগোপন থাকা দীর্ঘ প্রায় ১৭ বৎসর চৌদ্দগ্রামের জামায়াত নেতারা এখন মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। জামায়াত নেতারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়ে, সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে “কোরআনের শাসনের বাংলাদেশ গড়তে চাই” বলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
এদিকে, “আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গড়তে চাই”- এমন মিথ্যা শান্তনা দিয়ে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের ভোট পাওয়ার আশায় এবং তাদের অসমাপ্ত চৌদ্দগ্রামের অসংখ্য ঠিকাদারী কাজ এবং ব্যাক্তির মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জামায়াত নেতারা কৌশলে হাতিয়ে নেয়ার অসংখ্য তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বেশ কিছুদিন আগে জামায়াত ইসলামীর একটি গোফন মিটিংয়ে ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরের আপন ভাই হারুন প্রকাশ ছোট সাহেব তার বক্তব্যে বলেছেন, চৌদ্দগ্রামের আওয়ামীলীগের সাবেক চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে খারাপ কোন মন্তব্য করা যাবেনা। তাদেরকে আন্তরালে আমাদের সুবিধামতে ব্যবহার করার জন্য এখন রাখতে চাই। এরা এখন আমাদের জন্য খুব ভাল মানুষ। নির্বাচনের পর জামায়াত যখন ক্ষমতায় আসবে, তাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে আপনাদেরকে ভাষায় প্রকাশ করে এখন বুঝাতে পারবোনা। এ জন্য গোপনে আওয়ামীলীগকে হাতে রেখে আমাদের লড়াইটা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। এখন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবন খুব ছোট, কাজ অনেক বড়। বিশ্রামের কোনও সময় নেই।’
অপরদিকে, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা সারা দেশে চাঁদাবাজি ও দখল দারিত্বের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা হামলা মামলা জেল ঝুলুম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এত রক্ত এবং দীর্ঘ দিন কেন কারাবাস ছিলো? কারণ, বিএনপির চেয়েছে, এই সমাজের সব ধরনের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কবর রচিত হোক। জামায়াত ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যারা এসব করছেন, বিনয়ের সঙ্গে বলি, এগুলো বন্ধ করুন। তবে যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না মানেন, তাহলে আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। ছাত্রদল যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সন্তানেরা স্লোগান দিচ্ছে– অচিরেই বিএনপি এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করবে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামের বিএনপির রা এবং এখানকার মানুষ ভদ্র, বিনয়ী এবং সৎ। জামায়াত শিবিরের লোকজন ছাড়া মুন্সীহাট তথা চৌদ্দগ্রামে কেউ দখলবাজী এবং চাঁদাবাজি করে কিনা–?’ এমন প্রশ্নের উত্তরের নেতাকর্মীরা না’ বলে আওয়াজ তোলেন।
এবিষয়ে বিএনপির নেতা কামরুল হুদাকে সার্বিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাদের শহীদদের রক্তের প্রতি এটা কি ভালোবাসা? এই কাজ যারা করেন, বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করি, এই কাজটা ছেড়ে দেন। আমাদের শহীদরা কষ্ট পাবেন। অফিস আদালতে ঘুষ বাণিজ্য আছে, আবার মামলা বাণিজ্যও অনেকে করেন। তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, ভাই, এই কাজগুলো করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা বড় কষ্ট পাবে। আমাদের জীবন্ত সন্তানরা যারা শহীদ হওয়ার নিয়্ত করে রাস্তায় নেমেছিল, তারা কষ্ট পাবে। তাদের কষ্ট দেবেন না।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ভোটের রাজনীতির করতে জামায়াতের ইতিমধ্যে দিশেহারা হয়ে উঠেছে। চৌদ্দগ্রামের অধিকাংশ স্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠান জামায়াতের নেতারা তাদের দখলে নিয়ে গেছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আনাকানাচে হাট বাজার ও স্কুল মসজিদ পরিচালনা কমিটি জামায়াতের লোকজন দখল করে নিয়েছে।
জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে চৌদ্দগ্রাম পৌর বিএনপির আহবায়ক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এত ক্ষমতার মালিক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেন কেনো। বর্তমানে যারা স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে চৌদ্দগ্রামের রাজনৈতিক মাঠে পরিকল্পনা করার টার্গেট নিয়েছেন- তাদের অবস্থাও ঠিক ওদের মতই হবে ইনশাল্লাহ। সংগ্রহঃ সাপ্তাহিক ঢাকার কথা।
Leave a Reply