মীর হোসেন মোল্লাঃ ‘আয় রে নূতন আয়, সঙ্গে করে নিয়ে আয়/ তোর সুখ তোর হাসি গান’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই সুখ-হাসির প্রত্যাশা নিয়ে নতুনকে স্বাগত জানিয়েছেন। কবির মতো করেই বাংলদেশসহ সারাবিশ্বের মানুষই কোনো কিছু নতুনকে বিশেষ করে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় বুকভরা আশা আর চোখভরা স্বপ্ন নিয়ে।
আজ ১ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ। ঘড়ির কাঁটা ১২টা অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নতুন বর্ষ গণনা। বদলে গেল ক্যালেন্ডারের পাতা। প্রকৃতির আপন নিয়মেই মহাকালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর। বিদায় ইংরেজি ২০২৪, স্বাগত ২০২৫ সাল। হ্যাপি নিউ ইয়ার (শুভ নববর্ষ)। নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা সামনে নিয়ে শুরু হলো নতুন বছর।
রাতের আঁধার পেরিয়ে ভোরের পূর্বাকাশে আজ রক্তিম আভা ছড়িয়ে ফুটে উঠল নতুন বছরের নতুন সূর্য। বিদায়ী ২০২৪ সালের সব দুঃখ-বেদনা, হতাশা-গ্লানি ভুলে প্রাণে নতুন নতুন স্বপ্ন-আশা নিয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু, অতীতকে ভুলে নয়, অতীত স্মৃতি বুকে আঁকড়ে ধরেই নতুনের সঙ্গে পথ চলাই জীবনের নিয়ম। নতুন বছরে নতুন আলো, শান্তি ও সাফল্যের প্রত্যাশা জাগ্রত হয় মানুষের মনে। রাষ্ট্রপতি সাহবুদ্দিন আহমদ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সময় চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় অনেক কিছুই। এর মধ্যে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। পেছনে ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। এটাই পরম সত্য।
আমাদের জাতীয় জীবনে বিদায়ী বছরটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০২৪ অনেক ঘটনাবহুল একটি বছর। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নানা ঘটনার সাক্ষী ২০২৪। বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। বিশেষ করে বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সোচ্চার ছিল তারা। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সক্রিয় ছিল মাঠে। সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিংয়ে আতঙ্ক ছড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও। সহিংসতার একাধিক ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বছরের বড় নাটকীয় পরিবর্তন হচ্ছে প্রবল গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের পতন। জুলাই বিপ্লব নামে পরিচিত ছাত্র-জনতার আন্দোলন হচ্ছে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থান, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অসংখ্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৬ বছর একটানা দেশকে শাসন করার পর শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান।
এই বিজয়ের ধারার সূচনা হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এটি পরে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আরও প্রবল হয়ে উঠেছিল, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
সেই দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা ঘোষণা দেন এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সকল হত্যার তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
Leave a Reply