সোহেল রায়হান/ স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। বিশ্বমানবতার মুুক্তির দূত, আলোর দিশারী, বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাতের দিন। হিজরি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর বিখ্যাত কুরাইশ বংশে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এসেছিলেন অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে সত্য, ন্যায়, দয়া, সহমর্মিতা ও সমতার আলোয় উদ্ভাসিত করতে। তাঁর জীবনাদর্শ কেবল মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য পথনির্দেশনা। কোরআনের ভাষায় তিনি ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’—সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালিন অর্থাৎ, সব নবী ও রাসুলের নেতা। তিনি নিখিল বিশ্বের নবী। পবিত্র কোরআনের সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমি আপনাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।’ মহান আল্লাহ্ পুরো মানবজাতির জন্য সর্বাপেক্ষা কল্যাণকর, পরিপূর্ণ জীবন বিধান সংবলিত পবিত্রতম আসমানি কিতাব ‘আল-কোরআন’ নাজিল করেন মহানবী (সা.)-এর ওপর।
নবীজীর বাবা আবদুল্লাহ ও মা আমিনা। জন্মের আগেই রাসুল (সা.) তার বাবাকে হারান এবং ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। ৬৩২ খ্রষ্টিাব্দের একইদিনে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী বা সিরাতুন্নবী (সা.) হিসাবে পালন করেন। মুসলিম উম্মাহ্র জন্য আজকের এ দিনটি যেমন আনন্দের, তেমনি শোকের।
সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে দিনটি উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় ছুটি। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দেশের মসজিদ-মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-ধর্মীয় সংগঠনগুলোও আয়োজন করেছে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, বেশি বেশি দরুদ পাঠ, দান-খয়রাতসহ নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করছেন। অনেকে এই দিনে নফল রোজা রাখেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদষ্টো ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে আমি দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। আজ সেই মহিমান্বিত দিন, যেদিন আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল, হজরত মুহাম্মদ সা: দুনিয়ায় আগমন করেন।
তার আগমন মানবজাতির জন্য বয়ে আনে রহমত, শান্তি ও মুক্তির বার্তা। তৎকালীন আরব সমাজের অন্যায়, অসত্য ও অন্ধকার দূর করে মানুষকে তিনি আলোর পথ দেখান।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন নাজিল করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর জগতে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) অসীম ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে পবিত্র কুরআনের মর্মবাণী ছড়িয়ে দেন।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, মহানবী (সা.) একটি সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সকলের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে উম্মতদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং ইহকাল ও পরকালীন কল্যাণ নিশ্চিতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিটি কথা, কর্ম ও জীবনাদর্শ সকল মুসলমানের জন্য অবশ্য অনুসরণীয়।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস তার বাণীতে বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত ও নাজাতের জন্য প্রেরণ করেছেন।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ায় এসেছিলেন ‘সিরাজাম মুনিরা’ অর্থাৎ আলোকোজ্জ্বল প্রদীপরূপে। সব ধরনের কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার, দাসত্ব ও পাপাচারের অন্ধকার থেকে মানুষকে মুক্তি ও আলোর পথ দেখাতে শান্তি, প্রগতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আল্লাহর প্রতি অসীম আনুগত্য ও ভালোবাসা, অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, অপরিমেয় দয়া ও মহৎ গুণের জন্য পবিত্র কুরআনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকে বলা হয়েছে ‘উসওয়াতুন হাসানাহ্’ অর্থাৎ সুন্দরতম আদর্শ। তিনি বিশ্ব মানবতার জন্য যে অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন, তা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারি হিসেবে পথ দেখাবে।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সবার জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনবে।
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দিনটি উপলক্ষ্যে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
Leave a Reply