মিরপুর প্রতিনিধি: অভিযোগ ধর্ষণের, কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে এলো মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির প্রমাণ। মোবাইল লোকেশন, কল রেকর্ড এবং সাক্ষীদের বয়ান—সবই ইঙ্গিত দেয় মিরপুরের এক অধ্যক্ষকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। এই মামলার পেছনের সত্য কি সামনে আসবে?
রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক আয়া সাগরিকা বেগম মনি গত ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২, ঢাকায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটির তদন্তের জন্য পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দায়িত্ব প্রদান করেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীদের জবানবন্দি, ডিএনএ টেস্ট, মোবাইল লোকেশনসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাদিনী কিছু কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের প্ররোচনায় অধ্যক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলায় বলা হয়, ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ বিকেল ৩টায় মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২য় তলায় অধ্যক্ষের বাসায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অথচ কললিস্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, উক্ত সময় বাদিনী মাদারীপুর জেলার শিবচর এলাকায় অবস্থান করছিলেন—যা মিথ্যা মামলার প্রমাণ বহন করে।
ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে ভিকটিমের ভ্যাজাইনাল সোয়াবে কোনো পুরুষের বীর্যের উপাদান শনাক্ত হয়নি।
বাদিনীর মনোনীত এক সাক্ষী মো. লতিফ মোল্লা বলেন, তিনি বহু বছর আগে কলেজের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং মামলার আগে ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাকে না জানিয়ে স্বাক্ষী করা হয়েছে, এবং সে বিষয়ে তিনি ৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর: ৬৩২) করেন।
আরেক স্বাক্ষী তানভীর শেখ বলেন, মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না এবং না জেনে তাকে স্বাক্ষী করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। তিনি ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাদিনীর বিরুদ্ধে জিডি (নং: ১৩৬৮) করেন।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের ২০৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, সাগরিকা বেগম মনি ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে চাকরি ছেড়ে যাওয়ার পর কখনো স্কুলে আসেননি। শুধু অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের উদ্দেশ্যে কিছু ষড়যন্ত্রকারী শিক্ষক তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন, যা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
মামলা দায়েরের আগেই কলেজের সাবেক শিফট কো-অর্ডিনেটর জনাব সাফকাত ইসলাম নিজামীর কাছে ফোনে সাগরিকা অধ্যক্ষকে গালাগাল করে বলেন: “চাকরি খাইছে, চাকরির ক্ষতিপূরণ ও চাকরিতে পুনর্বহাল না করলে বড় ক্ষতি করব।” কথোপকথনের অডিও রেকর্ড রয়েছে।
এই হুমকির প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সাগরিকা বেগম ও তার সহযোগী সাংবাদিক মিজানুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর: ১৯৯২) করেন।
এরপর, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়, যা প্রতিহিংসামূলক ও অর্থ না দেওয়ায় প্রতিশোধমূলক বলে অভিযোগ উঠেছে।
মামলার আগে মিজানুর রহমান মোল্লা অধ্যক্ষকে ফোন করে বলেন, “আপনি সাগরিকাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছেন, ৭ লাখ টাকা দিতে হবে, না দিলে মামলা হবে।” কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও সংরক্ষিত আছে।
এছাড়া জানা গেছে, বালক শাখার নাইট গার্ড লিটনের সঙ্গে সাগরিকার প্রেমের সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে পারিবারিক কলহে লিটন আত্মহত্যা করেন। সালিশে কুরআন ছুঁয়ে সম্পর্ক না রাখার প্রতিজ্ঞার ভিডিওও রয়েছে।
অধ্যক্ষের বাসভবনে ১৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে এবং বাসায় সর্বদা পরিবারের সদস্য ও গৃহকর্মী অবস্থান করায় ধর্ষণের অভিযোগ বাস্তবসম্মত নয়। জুলাইয়ে ঘটনার দাবি করে অক্টোবরে মামলা দায়ের, তদন্তকারীদের মতে, এটিই সিসিটিভি ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্য প্রমাণ করে।
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, পিতা, সমাজের দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে সবসময় সততার সঙ্গে চলেছি। সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় আমার ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। এখন শুধু চাই—ন্যায়বিচার।”
Leave a Reply