রাসেল আদিত্য: গাজায় খাবার আনতে গিয়ে নতুন করে লাশ হয়ে ফিরেছেন কমপক্ষে ২৭ ফিলিস্তিনি।একইসাথে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯০ জন ক্ষুধার্ত নিরপরাধ ফিলিস্তিনি।আগ্রাসনের ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলি সেনারা ৩ জুন মঙ্গলবার গাজায় ত্রাণ বিরতণ কেন্দ্রের কাছে খাবারের জন্য অপেক্ষমান নিরীহ মানুষদের উপর গুলি ছুঁড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ শহরে ত্রাণ কেন্দ্রটিতে ওই ঘটনার সময় অনেক ক্ষুধার্ত লোকজন ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান ছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ঘটনার ব্যাখ্যায় মিডিয়াকে বলেছে,কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করার পর তারা গুলি চালিয়েছে।
এর আগে গত রবিবারও গাজার একটি ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষমান ক্ষুধার্ত মানুষের উপর গুলির ঘটনা ঘটেছিলো।যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)পরিচালিত রাফাহ কেন্দ্রে গুলি বর্ষনের কথা জানিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।সেই ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে।
রেড ক্রস জানিয়েছিল,তাঁদের হাসপাতালে ১৭৯ জন হতাহত আসে সেইদিন,যাদের মধ্যে ২১ জন মারা যান।অন্যদিকে হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা মৃতের সংখ্যা ৩১ জন বলে জানায়।
ওই হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস।
যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত রবিবার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছিলো।সেটি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে মঙ্গলবারের বর্বরোচিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক।
আর একই দিনে বাইডেন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাথু মিলার অবশেষে স্বীকার করেছেন,গাজায় সন্দেহাতীতভাবে যুদ্ধাপরাধ করেছে ইসরায়েল।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন,গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল।তিনি গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
ফলকার টুর্ক বলেন,টানা তিন দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে মানুষ নিহত হচ্ছেন।এই ঘটনায় দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন,গাজায় স্বল্প পরিমাণ খাদ্য সাহায্য নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা অকল্পনীয় ও অমানবিক।তিনি আরও বলেন, বেসামরিক জনগণের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন ও এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।
টুর্ক বলেন, ফিলিস্তিনিদের সামনে এখন সবচেয়ে ভয়াবহ দুটি বিকল্প রাখা হয়েছে,হয় অনাহারে মৃত্যুবরণ করা,না হয় সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রিত সহায়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে যে সামান্য খাবার দেওয়া হয়, তা আনতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারানো।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান আরও বলেন, ক্ষুধার হুমকি,গত বিশ মাস ধরে বেসামরিক মানুষের হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা,বারবার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং গাজা উপত্যকাকে জনশূন্য করার হুমকি,ইসরায়েলি নেতৃত্বের এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ হিসেবে অবশ্যই বিবেচিত হতে পারে।
অবশেষে অরিন্দম কহিল সকাশে:-
জো বাইডেন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র,ম্যাথু মিলার বলেছেন,”ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে, এনিয়ে তাঁর মনে কোনো সন্দেহ নেই”।
স্কাই নিউজের এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক এই মুখপাত্র।স্থানীয় সময় ২ জুন সোমবার এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে মিলার দায়িত্ব পালন করেন।নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তাঁর কাজ ছিল ইউক্রেন ও গাজাসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করা ও প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরা।
উপস্থাপক গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিলার বলেন, ‘আমি এটা গণহত্যা মনে করি না।কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে,এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’
সরকারে থাকাকালে কেন এ কথা বলেননি,এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক এই মুখপাত্র বলেন, ‘যখন আপনি মঞ্চে (সরকারি মুখপাত্র হিসেবে) থাকেন, তখন আপনি ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন না।আপনি সরকারের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন।সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই সিদ্ধান্তে আসেনি যে তাঁরা (ইসরায়েল) যুদ্ধাপরাধ করেছে। এখনো সে সিদ্ধান্তে আসেনি।’
তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজা ও ইউক্রেন নীতির বিষয়ে বাইডেনের ওপর বিরক্ত ছিলেন,এমন গুন্জন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মিলার সরাসরি না করেননি।বরং কিছু টানাপোড়েন ছিলো এমন ইঙ্গিত দেন।
সূত্র:- বিবিসি,ভয়েস অফ আমেরিকা,স্কাই নিউজ ও এএফপি।
Leave a Reply