মোঃ ওমর আলী মোল্যা/কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি:বেগুনী রঙের আভায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে সড়কের এক পাশ। থোকায় থোকায় প্রস্ফুটিত হয়ে ভিন্ন এক আবহ তৈরী করেছে সড়ক জুড়ে। সবুজ পত্র পল্লবকে ভেদ করে নিজেদের রুপ সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে জারুল ফুল। দৃষ্টিনন্দন এই গাছটি শুধু যে শোভা বর্ধন করেছে তেমনটি নয়, এটি দর্শক হৃদয়কেও আলোড়িত করেছে তার মোহনীয় সৌন্দর্যে।
গাজীপুর কালীগঞ্জের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে শীতলক্ষ্যা পাড়ের শশ্মানঘাট পর্যন্ত বয়ে চলা সড়কটির পাশে দন্ডায়মান জারুল গাছটি। সড়কটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত না হলেও দুইটি জারুল ফুলের গাছ যেন সেই অভাব মুছে দিয়েছে। গ্রীষ্মের তপ্ত গরমে মানব হৃদয় যখন নদী থেকে আসা শীতল হাওয়া গায়ে মাখার প্রয়োজন অনুভব করে তখন তারা এই সড়কটি ব্যবহার করে। পথিক এই পথ মাড়াতে গিয়ে জারুল ফুলের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তার ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। তরুণেরা সৌন্দর্য অবলোকনের পাশাপাশি সেলফি তুলায় হয়ে পড়ে ব্যস্ত।
বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল প্রকৃতিতে নিয়ে আসে এক অনন্য সৌন্দর্য। জারুলের বেগুনি রঙের থোকা থোকা ফুল গ্রীষ্মের খরতাপে ক্লান্ত প্রকৃতিকে শীতলতা এনে দেয়। জারুল গাছের উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, এবং এর পাতা গাঢ় সবুজ ও আয়তাকার। ফুলগুলো সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফোটে, তবে বর্ষা থেকে শরৎ পর্যন্ত এর রেশ থাকে ।
জারুল ফুলের ছয়টি কোমল পাপড়ি ও হলুদ পরাগকোষের সমন্বয় একে করে তোলে দৃষ্টিনন্দন। ফুলের বেগুনি রঙ কখনো কখনো সাদার কাছাকাছি পৌঁছায়, যা এর বৈচিত্রকে আরও বাড়িয়ে তোলে ।
জারুল গাছ শুধু সৌন্দর্যেই নয়, উপকারিতায়ও অনন্য। এর কাঠ লালচে রঙের, দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী, যা ঘরের কড়ি-বরগা, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। শত বছর ধরে আয়ুর্বেদী চিকিৎসায় জারুলের পাতা, ছাল ও বীজ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ।
সাহিত্যে জারুল ফুলের উল্লেখও পাওয়া যায়। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যে জারুলের কথা উল্লেখ করেছেন ।
জারুল ফুলের এই বহুমাত্রিক সৌন্দর্য, উপকারিতা ও সাহিত্যিক মূল্য একত্র করলে একে করে তোলে বাংলার গ্রীষ্মের এক অপরিহার্য অংশ।
কথা হয় পথিক পঙ্কজ সরকার নয়নের সাথে। তিনি বলেন, আমি আমার প্রয়োজনে উপজেলা পরিষদে এসেছিলাম। নির্ধারিত কাজ করতে দেরি হওয়ায় নদী পাড়ে যাচ্ছিলাম শীতল বাতাসে গা জুড়াতে। হঠাৎ জারুল ফুলের গাছ দেকে থমকে দাড়ালাম। আগে এই ফুলের গাছ অনেক দেখা গেলেও সম্প্রতি এদের তেমন একটা দেখা যায় না।
অপর পথিক মো. আনজুম হাসান জানান, তিনি একজন ব্যবসায়ী, বাস করেন রাজধানী শহরে। এই অঞ্চলে জমি কিনেছেন বিধায় তিনি এসেছেন। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে যাওয়ার সময় জারুল ফুলের গাছটি দেখে প্রথমে চিনতে পারেন নি। পরে তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি ফুলের নাম জানতে পারেন।
দর্শনার্থী তাসনিম সুবহা বলেন, আমাদের এই অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্তমান সময়ে জারুল ফুল শোভা পাচ্ছে এই সড়কে। আমরা এখন স্মৃতি জমিয়ে রাখছি। যখন এখান থেকে চলে যাবো তখন আমাদের এই সড়কের এই মুগ্ধতা, সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।
সড়কের পাশে এমন সুন্দর নান্দনীক ফুলের গাছ থাকাটা বাঞ্চনীয় মনে করছেন সাধারণ দর্শনার্থীরা। আর পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানোর বিকল্প দেখছেন না স্থানীয় পরিবেশবাদীরা।
Leave a Reply