জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান : বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড কুমারী এলাকায় ৩টি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ১ লাখ টাকা নেওয়ার ঘটনার এক বছর পর একই ষ্ট্যাম্পে ৫ লাখ টাকা লিখে ষ্ট্যাম্প পূরণ করে ধার নেওয়া খালেদা বেগমের বসতঘর জবর দখল করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শালিশী বৈঠকে স্বাক্ষী না দেওয়ায় স্বাক্ষী ও ধার নেওয়া নারীর উপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায় টাকা ধার দেওয়া বাহারের নেতৃত্বে।
ঘটনাটি গত ২৪ এপ্রিল সকাল অনুমান ৯:৩০ ঘটিকার সময় লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর কুমারী বাজারস্থ বাদীর বসত বাড়ী এবং জনৈক শাহনেওয়াজ বেগম এর বসত বাড়ীর উঠানে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল খালেদা বেগম (২৬), স্বামী-মোঃ ইসহাক, সাং-কুমারী বাজার, ০৪নং ওয়ার্ড, ফাঁসিয়াখালী ইউপি, থানা-লামা, বান্দরবান বাদী হয়ে ৫ (পাঁচ) জনের নাম উল্ল্যেখ করে আরো ৪ থেকে ৫ জন অজ্ঞাত আসামী করে লামা থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
এ ঘটনায় যাদেরকে বিবাদী করা হয়- ১। বৈশাখ (২৩), পিতা-সাইফুল, ২। রাধন (২৬), পিতা-অজ্ঞাত, ৩। সাইফুল ইসলাম (৪২), পিতা-দেলোয়ার, ৪। বাহার (৩৫), স্বামী-সাইফুল ইসলাম, সর্ব সাং-কুমারী বাজার, ০৪নং ওয়ার্ড, ফাঁসিয়াখালী ইউপি, থানা-লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলাসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন।
লামা থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, বাদী খালেদা বেগম ও তার স্বামী চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন বাঁশবাড়িয়া সাকিনে রাবার বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাই। কাজের সুবাদে আমি, আমার স্বামী-সন্তান নিয়া অস্থায়ী ভাবে বাঁশবাড়িয়া সাকিনে ভাড়া বাসায় বসবাস করি। অনুমান ১/২ মাস পর লামা থানা এলাকার নিজ বসত বাড়িতে আসা-যাওয়া করি। গত ২১ এপ্রিল আমি ও আমার স্বামী-সন্তান নিয়া চট্টগ্রাম হইতে লামা থানাধীন কুমারী বাজারস্থ নিজ বসত বাড়ীতে আসি। আমাদের বসত ঘরের নিকটবর্তী বিবাদীদের বসত ঘর। ১-৪নং বিবাদীদের আমি পূর্ব হইতে চিনি। বিগত প্রায় ০১ বছর পূর্বে আমার প্রতিবেশী সাক্ষী শাহনেওয়াজ বেগম (২৮), স্বামী-আমির হোসেন এর সম্মুখে ১০০ টাকার ৩টি নন জুডিসিয়াল খালি স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৪নং বিবাদীর নিকট হইতে ১ লাখ টাকা ধার নিই। বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে ৪নং বিবাদীর নিকট হইতে ধার নেয়া ১ লাখ টাকা হইতে ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করি এবং বাকী টাকা কিছুদিন পর পরিশোধ করবো বলে বিবাদীকে আশ্বস্ত করি। কিন্তু বিবাদী আমার নিকট হইতে নেওয়া ৩টি খালি ষ্ট্যাম্প পূরণ করে ৫ লাখ টাকা দাবী করিতে থাকে। বিষয়টি নিয়া এলাকায় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে একাধিক বার শালিস বৈঠক করে চেষ্টা করিলেও বিবাদীগণ তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। তারই ধারাবাহিতায় ২৪/০৪/২০২৫ইং তারিখ সকাল অনুমান ০৯:৩০ ঘটিকার সময় উপরোক্ত সকল বিবাদীগণ সহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীগণ লাঠি সোঠা নিয়া জনৈক শাহনেওয়াজ বেগম এর বসত বাড়ীর উঠানে আসিয়া শাহনেওয়াজ বেগম’কে অকথ্য ভাষায় গালি মন্দ করিতে থাকে এবং আমার পক্ষে সাক্ষী না দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করিতে থাকে। এতে শাহনেওয়াজ বেগম প্রতিবাদ করিলে ৪নং বিবাদীর হুকুম মতে ২নং বিবাদী শাহনেওয়াজ বেগম এর চুলের মুটি ধরে টানা হেচড়া করিয়া মাটিতে ফেলিয়ে দেয় এবং বিবাদীর হাতে থাকা গাছের লাঠি দ্বারা শাহনেওয়াজ বেগম এর কোমড়ে স্বজোরে আঘাত করে। অতপর সকল বিবাদীগণ সহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীগণ শাহনেওয়াজ বেগম’কে এলোপাতাড়ী লাথি, কিল, ঘুষি মারিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা-ফুলা জখম করে। শাহনেওয়াজ বেগম এর ডাক-চিৎকার শুনিয়া তাহাকে উদ্ধারের জন্য আমি সহ আমার স্বামী, আমার ছেলে মোঃ ইয়াছিন (০৮) আগাইয়া গেলে বিবাদীগণ আমাকে সহ আমার স্বামী ও আমার ছেলেকে এলোপাতাড়ী লাথি, কিল, ঘুষি মারিয়া আমাদের সকলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা-ফুলা জখম করে। আমাদের শোর চিৎকার শুনিয়া প্রতিবেশী- রশিদা বেগম (৫০), স্বামী-আকতার আহাম্মদ, জন্নাত আরা বেগম (৩৫), স্বামী-মৃত আবুল কাশেম, শাহারা বেগম (২৮), স্বামী-জয়নাল, আকতার আহাম্মদ (৫৫), পিতা-অজ্ঞাতসহ অন্যান্য লোকজন আগাইয়া আসিয়া বিবাদীদের কবল হইতে আমাদের উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে বাদী খালেদা বেগম বলেন,
এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করার পর বিবাদীগণ ঘটনাস্থল হইতে চলিয়া যাওয়ার সময় আমাদের সকলকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। আগত লোকজন এবং পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় ভিকটিম শাহনেওয়াজ বেগম’কে চিকিৎসার জন্য লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া ভর্তি করি। আমি, আমার স্বামী এবং সন্তান স্থানীয় চিকিৎসক এর নিকট হইতে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করি।
বাদী আরো জানায়, আমি বাড়িতে না থাকার সুবাদে অনুমান ০৮ মাস পূর্ব হইতে ৪নং বিবাদী আমার সেমি পাকা বাড়ীটি তালাবদ্ধ করিয়া রাখে এবং বর্তমানেও তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। ভিকটিম শাহনেওয়াজ বেগম এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং ঘটনার বিষয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের অবগত করে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করি। স্থানীয় ভাবে মিমাংসা না হওয়ায় লামা থানায় অভিযোগ করি।
বিষয়টি নিয়ে বিবাদী(টাকা ধার দেওয়া নারী) বাহার বলেন, আমার প্রতিবেশী মোঃ ইসহাক ও তার স্ত্রী খালেদা বেগম কয়েক বছর ধরে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে টাকা নিয়েছে। আমি মোট ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা তাদের কাছ থেকে পাওনা রয়েছি। তারা আমার টাকা গুলো দিচ্ছেনা। শুধু কালক্ষেপন করছে। প্রথমে আমরা হামলা করিনি। ওরা প্রথমে আমাদেরকে মারধর করায় আমরা পাল্টা মারধর করি।
এদিকে ফাঁসিয়াখালী স্থানীয় ইউপি ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আবু ওমর বলেন, বাহারের কাছ থেকে প্রতিবেশী মোঃ ইসহাক ও তার স্ত্রী খালেদা বেগম কয়েক দফায় টাকা নেওয়ার ঘটনায় কয়েক দফা শালিসি বৈঠক হয়। সর্ব শেষ ২৪ এপ্রিল বিকালে এ বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি। বাদী বাহার বিচার না মানায় আর সমাধন করা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে লামা থানার ওসি(তদন্ত) এনামুল হক ভূইয়া জানান, অভিযোগ পেয়েছি। আইনানুগ ব্যবস্থা হবে।
Leave a Reply