মোঃ সফিউল আলম: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যুবলীগ নেতার মালিকাধীন ‘কোয়ালিটি ব্রিকস্’ নামে ইটভাটা থেকে বেশি লাভের আশায় ৫০ লাখ টাকার ‘ফরওয়ার্ড ইট’ কিনে প্রতারিত হয়েছেন আবদুর রাজ্জাক নামের এক ব্যবসায়ী। ৪ বছরেও লভ্যাংশসহ মূল টাকা ফেরত দিচ্ছে না কালিকাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাঙ্গালমুড়ি গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে মোঃ আবদুল মালেক। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক প্রতারক যুবলীগ নেতা আবদুল মালেক ও তাঁর ভাই ভাটার পরিচালক তোফায়েল আহমেদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, জগমোহনপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক মিয়াবাজারস্থ ওহাব মার্কেটের মালিক। কালিকাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক ও তাঁর ভাই তোফায়েল আহমেদ ওই মার্কেটের ভাড়াটিয়া। আবদুল মালেক শ্রীপুর ইউনিয়নে কোয়ালিটি ব্রিকস্ নামে ইটভাটার মালিক। ২০২১ সালে ভাটা পরিচালনার জন্য টাকার প্রয়োজন পরায় আবদুর রাজ্জাককে অগ্রীম ‘ফরওয়ার্ড ইট’ কেনার প্রস্তাব দেয়। এরপর তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে আবদুর রাজ্জাক প্রতি পিস ইট ৫ টাকা করে ১০ লক্ষ ইট বাবদ আবদুল মালেককে ৫০ লাখ টাকা দেয়। জামানত হিসেবে আবদুল মালেক তার নামীয় ব্যাংক একাউন্টের ৫টি চেক ও প্রমাণ হিসেবে ক্যাশমেমো প্রদান করে। প্রতিমাসের ১৫-১৬ তারিখের মধ্যে আবদুর রাজ্জাককে লভ্যাংশ বাবদ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা ছিলে মালেকের। চুক্তি ভঙ্গ করা ও লভ্যাংশ না দেয়ায় কয়েকবার শালিশ বৈঠক বসলে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যুবলীগ নেতা আবদুল মালেক ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বলে। কিন্তু আবদুল মালেক শালিশের সিদ্ধান্ত মানেনি এবং আবদুর রাজ্জাক থেকে কোন টাকা নেয়নি বলে দাবি করে। কয়েকমাস পর আবদুর রাজ্জাকের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার শেষে আপোষ শর্তে ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর জামিনে বের হয়। পরবর্তীতে আবদুল মালেকের টাকা পরিশোধ না করে টালবাহান করতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ আব্বাস উদ্দিন যুবলীগ নেতা আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করেন। কোয়ালিটি ব্রিকস্ এর পাশ^বর্তী স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, ক্ষমতা প্রভাব খাটিয়ে কালিকাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক মানুষের কৃষি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি উত্তোলন করতো। অনেকের জমি থেকে মাটি কিনলেও নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করতো। এছাড়া আবদুর রাজ্জাকের সাথে লেনলেনের বিষয়টি সকলে জানলেও ক্ষমতার প্রভাবে সে অস্বীকার করতো। আবদুর রাজ্জাক ছাড়াও যুবলীগ নেতা আবদুল মালেকের প্রতারণার শিকার হয়ে আরও অনেকে। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যুবলীগ নেতা আবদুল মালেক লন্ডনে পালিয়ে গেছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
এ ব্যাপারে শনিবার কালিকাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক ও তাঁর ভাই তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া যায়।
Leave a Reply