কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা নগরের বিশেষায়িত একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগীকে ব্যবস্থাপত্রে নির্ধারিত ইনজেকশনের পরিবর্তে অন্য ইনজেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বিদেশি ইনজেকশনের কথা বলে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে রোগীকে ৬ হাজার টাকা মূল্যের দেশি কোম্পানির ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
নগরের ঝাউতলা এলাকায় অবস্থিত মুন হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালটির কনসালটেশন বিভাগের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঘটনার তদন্তের তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লার সিভিল সার্জনের কাছে ওই আদেশের চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই রোগীর নাম মনোয়ারা বেগম। তিনি জেলার বরুড়া উপজেলার বাতাইছড়ি জালগাঁও গ্রামের মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী। ১০ এপ্রিল মুন হাসপাতালে চিকিৎসক আশরাফ উল মতিনের প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসেন। আশরাফ উল মতিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি মুন হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আশরাফুল মতিনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ১০ এপ্রিল মনোয়ারা বেগম নামের রোগীকে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভার্টিস, সুইজারল্যান্ড) প্রদান করার কথা বলা হয়। যার বাজারমূল্য ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা বলে দাবি করা হয়। কিন্তু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা পরিবর্তন করে জোলেনিক (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা বাংলাদেশ), যার বাজারমূল্য ছয় হাজার টাকা প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি আলোচনায় এলে এ বিষয়ে আশরাফ উল মতিনের একটি স্বাক্ষরবিহীন প্রতিবাদলিপি প্রচার হয়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। এমতাবস্থায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
ওই চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুন হাসপাতাল লিমিটেডের কনসালটেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে হাসপাতালের আন্তবিভাগ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম চালু থাকবে। বিষয়টি সিভিল সার্জন কুমিল্লা তত্ত্বাবধান করবেন। এই আদেশ অমান্য করলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে মুন হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক আফসান আনিছ বলেন, রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন ওই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সহকারী, যিনি আমাদের হাসপাতাল কর্তৃক নিয়োগকৃত নন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে আমরা ওই চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ রেখেছি এবং তাঁর সহকারীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ওই চিকিৎসক চেম্বার করতে পারবেন না।
Leave a Reply