নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়াবাদ লালমাটিয়া মোড়ে মুল সড়ক দখল করে মেলা বসানোর ফলে জনজীবন চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। মেলার আড়ালে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, সংঘর্ষ ও নারীদের হয়রানির মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। মেলার পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হকের ছবি সংযুক্ত ব্যানার লাগানো থাকে মোড়ে।
সড়কে যানজট, বাড়ছে অপরাধ
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা এলাকায় প্রতিদিন দখলদারি, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে।
ব্যস্ততম কালসি মোড় থেকে লালমাটিয়া মোড়, শেখ কামাল চোরাই মোবাইল মার্কেট হয়ে নাভানা টাওয়ার, মিরপুর ১১ পর্যন্ত রাস্তা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এতে যানজটে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাশেই প্যারিস রোডের মাঠে বড় মেলা হচ্ছে, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো। অথচ এখানকার মেলা দখলদারি, মাদক ও সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সড়কে মেলা বসানোর নজির কোথাও নেই, অথচ পল্লবী থানা প্রশাসন নিশ্চুপ!”
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও মাদকের রমরমা ব্যবসা
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেলার জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। শত শত বাতি, নাগরদোলা ও রাইড চালানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে চোরাই বিদ্যুৎ। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু চক্রের সহযোগিতায় এই সংযোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, মেলার ছদ্মাবরণে মাদক সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যার পর মাদক বিক্রেতারা প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা করছে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে নারীদের উত্ত্যক্ত করছে, এমনকি শারীরিকভাবে হেনস্তাও করছে।
প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ও মেলা পরিচালনা কমিটির বক্তব্য
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না, কারণ ভয় আছে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা মুখ চেপে ধরে হুমকি দেয়। প্রশাসন দেখেও কিছু বলছে না।”
মেলা পরিচালনা কমিটির প্রধান কানা তাহের বলেন, “আমরা ডিসি ও ওসির অনুমতি নিয়ে মেলা করছি, বিএনপির লোকজনও এতে যুক্ত আছে।”
অপরদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একাংশের নেতারা বলেন, “আমরা কিছু বলতে গেলেই তারা বলে, আমরা নাকি মেলায় চাঁদাবাজি করতে গেছি! তাই চোখের সামনে এত বড় অপরাধ দেখেও চুপ থাকতে হয়।”
ভুক্তভোগীরা মনে করেন, এই মেলা বন্ধ হলে অন্তত ৫০% অপরাধ কমে যাবে। সড়ক উন্মুক্ত হলে যানজট কমবে, মানুষ নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, অভিযোগের সত্যতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Leave a Reply