নিজস্ব প্রতিবেদকঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ ও র্যাবের হয়ে দায়িত্ব পালন করা ১০৩ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ ও র্যাবের হয়ে দায়িত্ব পালন করা ১০৩ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া রয়েছেন এ তালিকায়। রয়েছে পুলিশের পাশাপাশি একসময় র্যাবে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার নামও। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১০৩ জন কর্মকর্তার অনুকূলে প্রদান করা পুলিশ পদক ২০১৮-এর পুলিশ পদক (বিপিএম), পুলিশ পদক (বিপিএম সেবা), রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম), রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম সেবা) নির্দেশক্রমে প্রত্যাহার করা হলো।’
যে ১০৩ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন, অনেকে পলাতক, কেউ গ্রেফতার, কেউ দুদকের মামলায় গ্রেফতার আছেন।
এদিকে ২৩ ফেব্রুয়ারি উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) পদের চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি স্বাক্ষরিত পৃথক চার আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। অবসরে পাঠানো চার ডিআইজি হলেন নিশারুল আরিফ, আমেনা বেগম, আব্দুল কুদ্দুস আমিন ও আজাদ মিয়া। তাদের মধ্যে আমেনা বেগম ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় নরসিংদীর এসপি ছিলেন। নিশারুল আরিফ রাজশাহীর ডিআইজি ও সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় আজাদ মিয়া কক্সবাজারে ও আব্দুল কুদ্দুস আমিন গোপালগঞ্জের এসপি ছিলেন।
চার আদেশেই সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থে চাকরি থেকে তাদের অবসরে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। ওই ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কোনো কারণ না দর্শিয়েই অবসরে পাঠাতে পারবে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পটপরিবর্তনের পর এ চারজনসহ জনাচল্লিশেক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা করা হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিতর্কিত নির্বাচনে কারা, কী ধরনের ভূমিকায় ছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবচেয়ে বিতর্কিত কাজে যারা জড়িয়েছেন, তাদের মধ্যে কারো চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি হলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। কেউ তুলনামূলক কম বিতর্কিত কাজে জড়ালে করা হতে পারে ওএসডি।
এর আগে বিগত তিনটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত) রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সাবেক জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে, এমন ২২ জনকে ২০ ফেব্রুয়ারি বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। সচিবালয়ে সেদিন সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। তার আগের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে কর্মরত যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের পদে থাকা প্রশাসনের ৩৩ কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে সরকার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ ফেব্রুয়ারি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া একটি পোস্টে বলেন, ‘২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে ৬৪ জেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপারদেরও (এসপি) ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে।’
Leave a Reply