মীর হোসেন মোল্লাঃ দুই বছরের পড়া এক বছরে শেষ করে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা অংশ নিতে হবে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর! সাধারণত নবম-দশম শ্রেণিতে একই পাঠ্যবই ও শিক্ষাক্রম থাকে। নবমে একটি অংশ, দশমে একটি অংশ ভাগাভাগি করে পড়ে শিক্ষার্থীরা। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনি পরীক্ষা নিয়ে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এবার নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা যে বই পড়েছে, দশমে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাঠ্যক্রম ও পদ্ধতি আলাদা। তারা নবম শ্রেণিতে বাতিল হওয়া ‘নতুন শিক্ষাক্রম’ পড়েছে। দশমে উঠে পড়বে ২০১২ সালে প্রণীত ‘সৃজনশীল শিক্ষাক্রম’। নবম-দশমের দুই বছরের সিলেবাস এক বছরে পড়ে কীভাবে শিক্ষার্থীরা শেষ করবে এবং এসএসসি পরীক্ষা দেবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। তাছাড়া কে বিজ্ঞান বিভাগ নেবে, কে মানবিক, কে বাণিজ্য—সেটাও ঠিক করতে হবে দশম শ্রেণিতে!
এদিকে পাঁচ দিনের মাথায় ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি); বদল এসেছে বাংলা বিষয়ে। বৃহস্পতিবার এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সংশোধিত এ সিলেবাস প্রকাশ করা হয়। এনসিটিবির একজন সদস্য ইত্তেফাককে বলেন, বাংলা বিষয়ের সিলেবাসে কিছুটা পরিবর্তন করায় পুরো সিলেবাস নতুন করে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত শনিবার ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার পুনর্বিন্যাস করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছিল। সেদিন এনসিটিবির ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের মোট ৩২টি বিষয়ের সিলেবাস প্রকাশ করা হয়। ২০২৫ সালে যারা দশম শ্রেণিতে উঠলেন তারা এ সিলেবাস অনুসরণ করবেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চালু করা ‘নতুন শিক্ষাক্রমে’ নবম-দশম শ্রেণির বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর ২০২৫ সাল থেকে আবার বিভাগ বিভাজন ফিরছে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী বিভাগ-বিভাজন ফিরিয়ে এনে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন ও নম্বর বণ্টন প্রকাশ করে এনসিটিবি। ঐ পরীক্ষার নম্বর বিভাজনে দেখা গেছে, ব্যবহারিক না থাকা বিষয়গুলোর রচনামূলক অংশে ৭০ নম্বর এবং বহুনির্বাচনি অংশে ৩০ নম্বর থাকবে। ব্যবহারিক থাকা বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ৭৫ ও ব্যবহারিক অংশে ২৫ নম্বর থাকবে। তত্ত্বীয় অংশে ৪০ নম্বর ও বহুনির্বাচনি অংশে ২৫ নম্বর থাকবে।
এদিকে এবার গুরুত্ব দিয়ে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে এখনো দশমের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পায়নি। দশম শ্রেণিতে বইয়ের মোট সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক) ফিরে আসায় বই বেড়েছে। সব বিভাগ মিলিয়ে বই ৩২টি। ফলে মোট বইও বেশি ছাপাতে হচ্ছে। জানা গেছে, দশম শ্রেণির সোয়া ১ কোটির মতো বই ছাপিয়ে স্কুলে পাঠানো হয়েছে। এখনো ৪ কোটি বই ছাপাতে হবে। হয়তো জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে দশমের শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে যাবে।
মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৬ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা দেবে জান্নাতুল মাওয়া তুলি। তার মা মোমেনা বেগম বলেন, ‘আমার একটাই মেয়ে। পড়ালেখায় ভালোই। কিন্তু যত সমস্যা দেখছি ওদের সময়ই হচ্ছে। নতুন কারিকুলামে নবম শ্রেণিতে পড়ল। এখন দশম শ্রেণিতে উঠে পুরোনো কারিকুলাম। কীভাবে পরীক্ষা হবে, কেমন হবে তা নিয়ে মেয়ে সব সময় টেনশন করে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে, ওর ছোট খালাকে জিজ্ঞাসা করে। মেয়ের এমন ভয় পাওয়া দেখে আমরাও টেনশনে।’
Leave a Reply