সোনারগাঁ প্রতিনিধি : এক তরুণীকে অপহরণের পর সপ্তাহব্যাপী আটক রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিবেশি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের হাসান নামে যুবকের বিরুদ্ধে। ধর্ষিত ওই তরুণীর গত ২ দিন ধরে সোনারগাঁ থানার ওসি এম এ বারীকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নেয়ার জন্য অনুরোধ করে আসছেন। কিন্তু ওই তরুণীর মামলার আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষককে থানায় ধরে এনে ওসি ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে, ১৫১ ধারায় চালান করে দেয় বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী। এ ব্যাপারে ২৬ জানুয়ারী (রোববার) পুলিশ হেডকোয়াটার্সে গিয়ে আইজিপি’স কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে, সোনারগাঁ থানার ওসির বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে ধর্ষণ মামলার আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্র জানায়, তার স্বামী কর্মসূত্রে প্রবাসে (সৌদী আরব) থাকার সুযোগে বিগত ৬ মাস যাবত তাকে- নানাভাবে উত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে উপজেলার ইলিয়াসদী গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিনের লম্পট ছেলে মো. হাসান। তার এসব কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তরুণীকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল হাসান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জানুয়ারি দুপুরে দড়িকান্দি এলাকা থেকে স্প্রে করে অজ্ঞান করে- একটি প্রাইভেটকার যোগে অপহরণ করে সাভারের অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায় হাসান। দুই দিন পর তার জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি নিজেকে একটি অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করেন। এ সময় লম্পট হাসান দেশিয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টানা এক সপ্তাহ ধরে অসংখ্যবার ধর্ষণ করে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার কৌশলে পালিয়ে এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে তার ভাইকে ফোন করেন ধর্ষিতা ওই তরুণী। খবর পেয়ে তার ভাই সাভার থেকে তাকে উদ্ধার করে সোনারগাঁ নিয়ে আসেন। ওই দিনই তিনি পরিবারের অভিভাবকদের নিয়ে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামলা করতে যান, কিন্তু সোনারগাঁ থানার ওসি এম এ বারী তাকে একটি অভিযোগ করে যেতে বলেন। ধর্ষিতা জেনেও তিনি তাকে মেডিকেল টেস্টের জন্য হাসপাতালে পাঠাননি, মামলার আবেদনটিও গ্রহণ করেননি।
এদিকে, পুলিশ শুক্রবার গভীর রাতে অভিযুক্ত হাসানকে সোনারগাঁও ইলিয়াসদী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। শনিবার সকালে সোনারগাঁ থানায় ধর্ষণ মামলা না দেয়ার জন্য ওসি এম এ বারীকে দেড় লাখ টাকা (৩টি ৫০ হাজার টাকার বান্ডেল) ঘুষ দিচ্ছে আসামির লোকজন। এ সময় তিনি ওসিকে আসামি পক্ষের লোকদেরকে বলতে শুনেছি, পুলিশ যখন ধরে এনেছে এমনিতে তো আর ছাড়া যাবে না। আসামিকে আমরা সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কোর্টে চালান দেব, যাতে আপনারা বিকালে মধ্যেই আসামির জামিন করে বাড়ি নিয়ে আসতে পারেন। আসামির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অবশেষে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার আসামিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে চালান করেন ওসি এস এ বারী। শনিবার সকালে কোর্টে চালান করলেও শনিবার বিকালেই খালাস পেয়ে- বাড়ি এসে তার বিরুদ্ধে থানায় করা অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। অন্যথায় স্বপরিবারে হত্যা করে গুম করার হুমকি দিচ্ছে লম্পট হাসান। তিনি আইজিপিকে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত ওসি এম এ বারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ধর্ষক ও অপহরণকারী লম্পট হাসানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতারের আবেদন করেন। সোনারগাঁও থানার ওসি এম এ বারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাসানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার কোন প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ১৫১ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। কোন প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply