1. mdmirhossainmolla.bd@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@banglarrup.com : Banglar Rup : Banglar Rup
বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জে আইনের শাসন ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ওসি মীর সাজেদুর রহমানের অঙ্গীকার গ্রাহকের জমানো টাকা দিতে পারছে না ব্যাংক চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত চৌদ্দগ্রামে ব্যবসায়ী টিপু হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন ও ৬ জনের ১০ বছরের সাজা জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে নারীর উপর বর্বর হামলা, নাগেশ্বরী থানায় মামলা দায়ের কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেফতার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্যানেল ডিসকাশন মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জামালগঞ্জে মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত কালীগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাহকের জমানো টাকা দিতে পারছে না ব্যাংক

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৪২ বার

আবদুর রউফঃ বর্তমানে তীব্র তারল্য সংকটে দেশের কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েও সংকট কাটাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নিজেদের জমানো টাকা তুলতে গিয়ে পদে পদে গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, কর্মকর্তাদের অসহযোগিতামূলক আচরণ এবং নানা অজুহাতে টাকা দিতে বিলম্ব করার মতো ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরজমিন সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংকের শাখা পরিদর্শনে গিয়ে গ্রাহকদের অতি প্রয়োজনেও টাকা না পাওয়ার বেশ কিছু চিত্র চোখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ই আগস্ট পতিত আওয়ামী সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকে আমানত তোলার হিড়িক পড়েছিল। তখন নগদ অর্থের সংকটে পড়ে ব্যাংকগুলো। সেই সংকট এখনো চলমান রয়েছে। এ কারণে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারছেন না। এই ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হলেও সংকট পুরোপুরি কাটেনি। মূলত তারল্য সংকট এবং কিছু ব্যাংকের আর্থিক অনিয়মের কারণে গ্রাহকরা তাদের আমানত ফেরত পাচ্ছেন না। বিশেষ করে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে এই সংকট বেশি দেখা যাচ্ছে।

এর আগে গত নভেম্বরে ব্যাংকে টাকার ক্রাইসিস হলে গ্রাহকদের প্রয়োজন ছাড়া টাকা না তোলার আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের আগস্ট মাসের পর তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিপাকে গ্রাহকরা: টাকা না পাওয়ায় সংসারের দৈনন্দিন কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহকদের। চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানের স্কুলের বেতন-ভাতা প্রদান নিয়ে গ্রাহকরা বিপাকে আছেন। কোনো কোনো ব্যাংকে তদবিরে পাঁচ/দশ হাজার টাকা মিললেও পরের সপ্তাহের আর মিলছে না। বেশ কিছু জায়গায় ব্যাংকের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকরা। কর্মকর্তারা ব্যাংকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এ ছাড়া একাধিক ব্যাংকে গ্রাহক-কর্মকর্তা বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটেছে। যদিও ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য আছে এমন অনেকে তদবির করে সামান্য টাকা তুলতে পারছেন। তবে অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা পাচ্ছেন না। মোটাদাগে তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে- গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইসিবি, ইউনিয়ন, এক্সিম, পদ্মা, ন্যাশনাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, টাকা না পেয়ে হতাশা আর বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকরা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহককে কীভাবে সামলাবো বুঝে উঠতে পারছি না। তবে দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

মতিঝিলের এসআইবিএল’র লোকাল অফিসের সামনে কথা হয় কবিরুল ইসলাম নামে এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে আমি এসআইবিএলে সার্ভিস নিচ্ছি। কিন্তু এখন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সপ্তাহে পাঁচ হাজার টাকা দেয় না। এ ছাড়া গ্রাহকদের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ রয়েছে। কবির বলেন, একটু বসেন আসছি বলে ম্যানেজার চলে যান। দুই ঘণ্টা পরে আসেন। আবার কোনো শাখায় ৩০ হাজার টাকার চেক নিয়ে গেলে ৫, ১০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছে, আপাতত চলুন, আগামী সপ্তাহ থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এত মাস অতিবাহিত হলেও ঠিক হয়নি।

সমপ্রতি ন্যাশনাল ব্যাংকের শাখায় টাকা তুলতে গিয়েছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি জানান, পেনশনের পুরো টাকা জমা করেছিলাম। তার সামান্য কিছু টাকা তুলতে এসেছিলাম। সকাল ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি, দুপুর দেড়টা বেজে গেলেও টাকা দেইনি। কখনো বলছে সার্ভার ডাউন, কখনো বলছে ক্যাশে পর্যাপ্ত টাকা নেই। আমাদের নিজের টাকা তুলতেও যদি এত কষ্ট করতে হয়, তাহলে আর ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ কী।
পদ্মা ব্যাংকের মৌচাক শাখায় কথা হয় গ্রাহক নুরুজ্জামান সৈকতের সঙ্গে। তিনি ৫০ হাজার টাকা তুলতে এসেছেন। কিন্তু তাকে দেয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, আমার একটা ছোট্ট ব্যবসা আছে। এখানে কয়েকজন কর্মীও রয়েছে আমার। ব্যাংকে টাকা থাকা সত্ত্বেও এখন তাদের টাকা দিতে পারছি না।
আইসিবি ব্যাংকের ফকিরাপুল শাখার সামনে কথা হয় সাইফুলে সঙ্গে। তার অসুস্থ বাবার দেয়া চেক নিয়ে দুই মাস ধরে ঘুরছেন। নিজের সেমিস্টার ফি ও বাবার চিকিৎসার জন্য দুই লাখ টাকার চেক কোনোভাবেই তিনি ক্যাশ করতে পারছেন না। টাকাটা খুবই প্রয়োজন তার। তিনি বলেন, নিজেদের জমানো টাকা তুলতে এভাবে জুতা ক্ষয় করতে হবে তা কখনো ভাবিনি। এই টাকা কবে পাবো, তাও বলতে পারছি না।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ভোগান্তি: শুধু রাজধানী নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক ব্যাংকের শাখাতেও টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা ঘুরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের নবাবগঞ্জের বান্দুরা শাখায় টাকা তুলতে না পেরে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় গ্রাহকদের। সুফিয়া বেগম নামের এক গ্রাহকের ১৫ লাখ টাকা জমা ছিল। সেই টাকা তুলতে গেলে তাকে ৫/১০ হাজার নিতে বলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। আনোয়ারা বেগম নামের আরেক গ্রাহকের আমানত ছিল ৮ লাখ টাকা। সেই টাকাও তুলতে পারেননি বলে জানান তিনি।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক সোহেল রানা বলেন, ব্যাংকটির মিরপুর শাখায় তার প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো আমানত ছিল। শাখা থেকে টাকা না পেয়ে তিনি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লাখ খানেক টাকার মতো তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তাও ১০-২০ হাজার করে। একবারে টাকাগুলো পাননি।

ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমছে: দেশের ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৭৪ শতাংশ বেশি। মার্চ পর্যন্ত আমানত কমার তালিকায় ছিল ১১টি ব্যাংক, যা মে মাসে বেড়ে ১৬টিতে পৌঁছেছে।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশে সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকা ধার নেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ায় এই সংকট কিছুটা নিরসন হয়েছে। তবে এখনো ব্যাংকগুলোর খারাপ অবস্থা কাটেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। ইসলামী ধারার ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ নিয়ে গেছে, যা পুনর্গঠনের জন্য ৩৫ বিলিয়ন ডলার লাগবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া আইনের ব্যত্যয় তো হয়েছেই, সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াগুলোও ধ্বংস করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews