কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: দীর্ঘ ১৭ বছর মামলা হামলায় ক্ষতবিক্ষত বিএনপি-নতুন নেতৃত্ব ও নৈতিক পুনর্গঠনের আহ্বান সময়ের অনিবার্যতা। একটি ঐতিহাসিক শক্তি, আজ বিভ্রান্তির পথে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস, আন্দোলন, ও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে দলটির রয়েছে একটি শক্তিশালী জনসম্পৃক্ত পরিচয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলের অভ্যন্তরীণ চিত্রে ভেসে উঠেছে দিকহীনতা, নেতৃত্ব সংকট ও সাংগঠনিক জড়তা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—এখন কি সময় নয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান শুরুর।বাইরের কণ্ঠস্বর দলীয় সংকটের প্রতিচ্ছবি।বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের ভেতর এমন কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে যাদের আদর্শিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। কেউ কেউ দলের মূল চেতনা বিস্মৃত হয়ে পড়েছেন, আবার কেউ দলীয় সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মত প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট। এই পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে একটি জননন্দিত রূপক—”কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ছে।”অর্থাৎ, বহিরাগত ও সুবিধাবাদী চিন্তাধারা যদি এখনই দমন না করা হয়, তবে তা একসময় দলের মূল অস্তিত্বকেই গ্রাস করতে পারে।
সময়ের অনিবার্য দাবি।শুদ্ধি অভিযান মানে কেবল দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়, এটি আদর্শিক ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের একটি প্রক্রিয়া। বিএনপির বর্তমান বাস্তবতায় চারটি দিক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ:
১. নেতৃত্বের নির্ভুলতা যাচাই: ত্যাগী ও আদর্শিক নেতাদের গুরুত্ব না দিয়ে সুবিধাবাদীদের প্রাধান্য দিলে দল দুর্বল হবে।
২. নৈতিক অবস্থানের পুনরুদ্ধার: জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে দলীয় অবস্থান অস্পষ্ট হলে বা আপসের রাজনীতি হলে জনগণের আস্থা হারায়।
৩. গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি: দলের ভেতরে মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হলে নেতৃত্ব একনায়কতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
৪. তৃণমূলের হতাশা:;শীর্ষ নেতৃত্বের স্বজনপ্রীতি ও মনোনয়ন বাণিজ্য তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করছে। রাজনীতির ভারসাম্যে শূন্যতা: নতুন বিপদের ইঙ্গিত শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশের গণতন্ত্রের জন্যও এটি একটি বিপজ্জনক সংকেত। একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দলের অভাব সংসদীয় গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলে। ফলত একদলীয় আধিপত্য দীর্ঘমেয়াদে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা উসকে দিতে পারে।
সম্ভাব্য করণীয়: একটি নবযাত্রার খসড়া: *দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কঠোর অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই।*অভিনব রাজনৈতিক কর্মসূচি চালু করে জনসম্পৃক্ততা পুনরুদ্ধার।*তৃণমূলকে সক্রিয় করে মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি।* গ্রহণযোগ্য ও কর্মক্ষম নতুন নেতৃত্ব গঠনের সাহসী পদক্ষেপ। এখনই সময় আত্মসমালোচনার:
বিএনপির সামনে এখন দুটি পথ—একটি হলো পরিবর্তনের পথে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের ঘর গোছানো, অন্যটি হলো আত্মবিনাশের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া। যদি এখনই কার্যকর শুদ্ধি অভিযান চালানো না হয়, তবে দলের ভেতর কোকিলের ডিম থেকে জন্ম নেওয়া নতুন কণ্ঠস্বর ভবিষ্যতে দলের পরিচয়কেই অচেনা করে তুলতে পারে।
Leave a Reply