মোঃ শফিকুল ইসলাম/ বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি : আলীকদম মারাইংতং পাহাড়ে দুই মৌজার সীমানায় পাহাড় দখল আধিপত্য বিস্তারেকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে।
গত বুধবার (২১ মে) সেখানে মারাইংতং জাদী বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙার অপচেষ্টার ঘটনা ঘটে। পর দিন ২২ মে সকাল আলীকদম জোনের উপ অধিনায় মেজর মঞ্জুর মোর্শেদ, পিএসি ঘটনাস্থল পাহাড় চূড়া ঘুরে দেখে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় দু:খ প্রকাশ ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। তার আগে ২১মে সন্ধ্যা-রাতে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন, থানার ওসি মির্জা জহির উদ্দিন ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজার রাখার অনুরোধ জানান।
সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো-সহ আরো কয়েকজনকে দায়ী করে অংহ্লাচিং মার্মা নামের এক বাসিন্দা আলীকদম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে ২২ মে রাত সাড়ে নয়টায় থানার ওসি জানায়, মামলা এখনো হয় নাই প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনা অনুন্ধানে জানাযায়, এর আগে গত ৪ঠা এপ্রিল সেখানে চংপাত হেডম্যানের নির্মিত তিনটি জুমঘর লুটতরাজ ও ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় সাঙ্গু মৌজা চংপাত হেডম্যান বাদী হয়ে চিহ্নিত ১০জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামী করে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন হয় মর্মে লামা থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আসামী করা হয়, যথাক্রমে, উ,উইচারা ভিক্ষু, অংসুই থোয়াই মার্মা, মংক্যনু মার্মা, ধুংড়ি মং মার্মা, মংচিংথোয়াই মার্মা, অংহ্লাচিং মার্মা, উক্যজাই মার্মা, দুংথোয়াই অং মার্মা ও অনুমং মার্মা। এরা সবাই আলীকদমের স্থানীয় বাসিন্দা। অভিযোগ পেয়ে ৬ এপ্রিল সরেজমিন তদন্তে যান লামা থানা অফিসার ইনচার্জ, সাথে আলীকদম থানার ওসিও ঘটনাস্থল দেখতে যান।
অপরদিকে একই ঘটনা উল্লেখ করে লামা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারা চেয়ে আরেকটি অভিযোগ করেছেন চংপাত ম্রো হেডম্যান। ৫ মে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, লামা থানার ওসি এবং বান্দরবান জেলা জেলা পরিষদ সদস্য খামলাই ম্রো ও লামা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা থোয়াইনু অং চৌধুরী ঘটনাস্থল দু’মৌজা সীমানা ম্যারাইনতং পাহাড় চূড়া পরিদর্শন ও তদন্তকালে ম্রোদের বক্তব্য শ্রবন করেন। ম্রো জুমিয়ারা ওইদিন জানিয়েছিল উ,উইচারা ভিক্ষু বুদ্ধ বিহারের নাম ভাঙ্গিয়ে সাঙ্গু মৌজার অংশে ম্রোদেরকে স্বাধীনভাবে জুম ফসল করতে দিচ্ছেন না। বিহার সংলগ্ন সাঙ্গু মৌজায় তিঁনি (ভিক্ষু) স্থাপনা নির্মান করে পর্যটন ব্যাবসা করছেন কিন্তু বিহারের দোহায় দিয়ে ম্রোদের মালিকানায় তিনটি জুমঘর ভেঙে দেয়।
তদন্তকালে সেদিন চংপাত ম্রো হেডম্যানের জুমঘরের জায়গায় দক্ষিন দিকে আনুমানিক চার ফুট বাই ৬ ফুট সাইজের মাটি থেকে প্রায় চার ফুট উচুঁ টেবিল সাদৃশ্য নতুন একটি পাকা স্থাপনা দেখাগেছে। ওই দিন সাঙ্গু মৌজাসহ আশপাশের বাসিন্দা তিন শতাধিক ম্রো জনতা উপস্থিত হয়ে জুমঘর লুটতরাজ, ভাঙচুরসহ সাঙ্গু মৌজা অংশে ম্রো জুমিয়াদের জুমচাষে উ,উইচারা ভিক্ষুর একক কর্তৃত্ব, ম্যারাইনতং বৌদ্ধ বিহারের নামে সাঙ্গু মৌজার জায়গা দখল করে পর্যটন পড হাউস বানিয়ে বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানায়। ওই সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। বিরোধপূর্ণ অংশে মৌজা সীমানা চিহ্নিত করার আগ পর্যন্ত উভয় পক্ষকে নতুন করে কোনো কর্মকান্ড না করার নির্দেশ দেন।
কয়েকজন ম্রো জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিদর্শন করে আসার পর, উ,উইচারা ভিক্ষু চংপাত ম্রো হেডম্যানের ভেঙে দেয়া জুমঘরের পাশে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এইদিকে বান্দরবান জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাবেক সাংসদ সাচিং প্রু জেরী এঁর তত্বাবধানে লামা-আলীকদমের মার্মা ও ম্রো সম্প্রদায় থেকে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘ম্যারাইনতং গোল্ডেন প্যাগোড়া’ সংরক্ষণ আহ্বায়ক কমিটি করে দেয়া হয়। জানাযায়, ২১ মে বুধবার দুপুরে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক লামা উপজেলা পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান বিএনিপি নেতা থোয়াইনু অং চৌধুরী ও সদস্য সচিব বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য খামলাই ম্রো ম্যারাইনতং পাহাড়ে বিরোধপূর্ণ মৌজা সীমানা পরিদর্শন করেন। এর পর বিকেলের কোনো এক সময় কে বা কারা সেখানে নির্মাণাধীন বুদ্ধমূর্তি ভাঙার অপচেষ্টা চালায়।
২২ মে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখাযায়, নির্মাধীন বুদ্ধমূর্তির বাঁদিকে নিচে টেবিলের একটি ইট ও বাঁ হাতের কিয়দাংশ কংক্রিটের ঢালাই ভাঙা রয়েছে। এ বিষয়ে সাঙ্গু মৌজা হেডম্যান চংপাত জানান, ‘বুদ্ধমূর্তিকে আমরা ম্রো’রা জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। এই পাপ কাজ যারা করেছে, তারা মানুষ নয়’। চংপাত আরো জানান, ‘আমার জুমঘর যারা ভেঙেছে, তারাই বুদ্ধমূর্তি ভেঙে নাটক মঞ্চস্থ করে তাদের অপরাধ ঢাকতে চাচ্ছে। ঘটনা সাজিয়ে আমাদেরকে মিথ্যা দোষারোপ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার করাচ্ছে।’ এক ম্রো ছাত্র নেতা মুঠোফোনে জানান, আওয়ামী দোসর উ,উইচারা ভিক্ষুদ্বারা সেখানকার ম্রো জনগোষ্ঠী দীর্ঘ বছর ধরে বঞ্ছনার শিকার হয়ে আসছে। বর্তমানে সাঙ্গু মৌজার জুম পাহাড়ে অবৈধ দখল, আধিপত্য বজায় রাখতে উ,উইচারা ভিক্ষু বুদ্ধমূর্তি ভাঙিয়ে ম্রো নেতৃবৃন্দকে দোষারোপ করছেন। এর সঠিক তদন্ত দাবি করেন এই ছাত্র নেতা।
২২ মে দুপুরে এই ঘটনা কারা করতে পারে; ওই পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে উ,উইচারা ভিক্ষুর কাছে জানতে চাইলে তিঁনি প্রথমে বলেন, এটা কারা করেছে ভগবান জানেন, পরে আবার তিনি ২১ মে তদন্ত টিমের সাথে যাওয়া ম্রোদের দিকে ঈঙ্গিত করেন।
২২ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মুঠো ফোনে কলকরে জানতে চাওয়া হলে তিঁনি জানান, ‘বুদ্ধমূর্তি ভাঙ্গার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মৌজা সীমানা সংক্রান্ত বিষয়টি কয়েকদিন পর বান্দরবানে অনুষ্ঠিতব্য মিটিংয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দৃষ্টি কামণা করা হবে।
সরকারি বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীসহ বৌদ্ধমূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার দাবি করেছেন ম্রো ও মার্মা সম্প্রদায়ের উভয় জনগোষ্ঠী জনগোষ্ঠী।
Leave a Reply