কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা নগরীর কেন্দ্রস্থল কান্দিরপাড় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অতি মূল্যবান ১০ শতক জায়গা যোগসাজশে দখল করে সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস করার অভিযোগ উঠেছে। কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ২০১৭ সালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলকে হাত করে নানান কৌশলে সেই জায়গা হাতিয়ে নিয়ে ৯তলা ভবন নির্মাণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়। সাবেক কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল ওই সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) কুমিল্লা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স (এফএফ) ফাউন্ডেশনের নেতারা। এ সময় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের এ জায়গাটি ফিরে পাওয়ার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির কুমিল্লা শাখার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস আলী।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে বরাদ্দকৃত জায়গাটি অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলের কাছ থেকে এক কোটি ৪৮ লাখ টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রি দলিল (নং-৮৪১৩) করে নেন কুমিল্লা সদরের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। ওই জায়গাটি বিক্রির টাকা এনসিসি ব্যাংক কুমিল্লা শাখায় তার (সফিউল আহমেদ বাবুল) ব্যক্তিগত হিসাবে জমা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামীয় জায়গা এক ব্যক্তি কীভাবে দলিল সম্পাদন করতে পারে- এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে এ বিষয়ে ২০২৩ সালে হাইকোর্ট একটি রিট পিটিশন করা আছে।’ বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘সাবেক এমপি বাহার ও সফিউল আহমেদ বাবুল যোগসাজশে মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গাটি হাতিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে গত ১৩ এপ্রিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট কেন্দ্রীয়ভাবে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর আগেও ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নিকট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় ভবন ভেঙে বিক্রয় প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা একটি অভিযোগ দিলেও তখন এমপি বাহারের প্রভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা আমাদের জায়গা ফেরত চাই।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে এফএফ ফাউন্ডেশনের সদস্য অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর হারুনুর রশিদ, মুকবুল আহমদ, মো. হানিফসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ‘জায়গাটি বিক্রি করা হয়নি। আওয়ামী লীগের সময়ে জায়গাটি অবৈধভাবে দখল করে নেওয়া হয়েছিল। জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধাদেরই রয়েছে। এছাড়া এনসিসি ব্যাংকে আমার কোনো হিসাব নেই।’ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত বছরের পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।