রাসেল আদিত্য/স্পোর্টস ডেস্ক: অনেক ভাবেই আপনি এই প্রতিবেদন শুরু করতে পারেন।প্রীতির আবারও স্বপ্নভঙ্গ বা কোহলির স্বপ্নপূরন অবশেষে এমন আরও অনেক কিছু্।কিন্তু আমার নিকট বারবার সেই নারীর উঁচিয়ে ধরা প্ল্যাকার্ডের কথাই মনে হচ্ছিল।ম্যাচ যখন দেখছিলাম,তখন কয়েকবার মনে এই প্রশ্নটা উঁকি দিয়েছে,যদি সত্যিই ব্যাঙ্গালুরু হেরে যায় তবে কি সত্যিই ঐ নারী কাজটি করে বসবেন?আর তাঁর স্বামী বেচারারই কেমন অবস্থা মনের?
বলছিলাম আইপিএল কোয়ালিফায়ার নম্বর ওয়ানে এই দুই দল যখন মুখোমুখি মাঠে, গ্যালারিতে তখন কয়েকবার একটা প্ল্যাকার্ডকে দেখাচ্ছিলো টিভি ক্যামেরা।এক নারী ওটাতে লিখে এনেছিলেন,”এবার যদি ব্যাঙ্গালুরু শিরোপা না জিতে,তাহলে তিনি তাঁর স্বামীকে ডিভোর্স দিবেন!”পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল ওটা।
যাক,শেষ পর্যন্ত ছয় রানের জন্য বেঁচে গেলো ঐ নারীর সংসার।আসলে বাঁচিয়ে দিলেন কোহলিরা, অথবা নেহাল ওয়াধেরার কচ্ছপ গতির ব্যাটিংও বলতে পারি।যাইহোক,স্বপ্নপূরণের খুব কাছে এসেও চোখের জলেই ভাসতে হলো প্রীতি জিনতাকে।আর খুব বড়ো লক্ষ্য না দিয়েও ১৮ বছরের স্বপ্ন অবশেষে ধরা দিলো ব্যাঙ্গালুরু আর বিরাট কোহলিকে।আইপিএল ফাইনালে ৬ রানে পান্জাব কিংসকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন কোহলি এন্ড কোং।
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বিশ ওভার শেষে ৯ উইকেটে তুলেছিল ১৯০ রান।ব্যাঙ্গালুরু বিধ্বংসী শুরু করতে পারেনি।দলীয় ১৮ রানে প্রথম,৫৬ রানে দ্বীতিয় এভাবে করে ধারাবাহিক ভাবে উইকেট হারায় তাঁরা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করা কোহলির ১২৩ স্ট্রাইক রেট দেখেই কিছুটা আন্দাজ করা যায়, আসলে উইকেট হয়তো ধুমধড়ক্কা ব্যাটিংয়ের জন্য উপযুক্ত ছিলোনা।এদিন কোহলিকে একের পর এক বাউন্সার আর স্লোয়ারে আটকে রাখতে পেরেছেন পাঞ্জাবের বোলাররা।
ব্যাঙ্গালুরুর ১৯০ রান আসলে দলের ব্যাটারদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এসেছে।রজত পতিদার,লিয়াম লিভিংস্টোন,মায়াঙ্ক আগারওয়াল আর জিতেশ শর্মা,সবাই ২০ প্লাস রান করেছেন।এঁদের মধ্যে জিতেশ শর্মার ২৪ রানের ইনিংসটির কথা না বললেই নয়।ওটা ছিল সবচেয়ে বেশি কার্যকর দলের জন্য।তাঁর ১০ বলে ২৪ রানের ইনিংসের জন্যই মনে হচ্ছিল ২শ প্লাস রান করবে কোহলিরা। তবে শেষ ওভারে বাঁহাতি পেসার অর্শদীপ সিং মাত্র ৩ রান দিলে সেটি আর হয়নি। পান্জাব বোলারদের মধ্যে আর্শদীপ ৪০ রানে ও কাইল জেমিসন ৪৮ রানে নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিংয়ে ৪৩ রানপর জুটি গড়ে শুরু করলেও হিসেবি ব্যাটিং করেছে তারা অজানা কারণে।কেননা এই আসরে ১৯১ খুব আহামরি লক্ষ্য ছিলোনা।এবারের আইপিএলে আহমেদাবাদে প্রথম ইনিংসে এটিই সর্বনিম্ন সংগ্রহ।কিন্তু ঐ হিসেবি ব্যাটিং করতে গিয়ে কাজটা শেষ পর্যন্ত দুরুহ করে তোলেন পান্জাব ব্যাটাররা।শশাঙ্ক নামের আশ্চর্য ব্যতিক্রমী ব্যাটার শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে অপরাজিত ৬১ রানের দূরন্ত ইনিংস খেললেও বিশ ওভার শেষে পাঞ্জাব করতে পেরেছে ৭ উইকেটে ১৮৪। জয়ের ব্যবধানটা ৬ রান হলেও প্রীতি জিনতার দল ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে কয়েক ওভার আগেই।
বলা যায়,তাঁরা স্পিনার ক্রুনাল পান্ডিয়ার ৪ ওভারে ১৭ রানে ২ উইকেট আর ফাইনালের চাপেই যেন হেরে গেছে।ওপেনার প্রভাসিমরান সিং, প্রিয়াংশ আর্য থেকে শুরু করে নেহাল ওয়াধেরা, সবাই যেন খোলসবন্দী ছিলেন।
প্রিয়াংশ করেন ১৯ বলে ২৪, প্রভাসিমরান ২২ বলে ২৬। তবে পাঞ্জাবের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছেন ওয়াধেরা। ১৮ বলে তাঁর ১৫ রানের মন্থর ইনিংসেই পাঞ্জাব অনেকটা পিছিয়ে পড়ে।
ওপেনার প্রভসিমরান সিং, প্রিয়াংশ আর্য থেকে শুরু করে নেহাল ওয়াধেরা—সবাই যেন খোলসবন্দী ছিলেন। প্রিয়াংশ করেন ১৯ বলে ২৪, প্রভসিমরান ২২ বলে ২৬। তবে পাঞ্জাবের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছেন ওয়াধেরা। ১৮ বলে তাঁর ১৫ রানের মন্থর ইনিংসেই পাঞ্জাব অনেকটা পিছিয়ে পড়ে।
জশ ইংলিশ ২৩ বলে ৩৯ রান করেও আগের ব্যাটারদের মন্থরতার ঘাটতি পোষাতে পারেননি।পান্ডিয়ার বলে যখন তিনি আউট হন তখন পাঞ্জাবের দরকার ৪৭ বলে ৯৩।ভুবনেশ্বর কুমার, জশ হ্যাজলউডদের বিপক্ষে এই রান করা সহজ ছিলোনা।শশাঙ্কের অতি মানবিয় ব্যাটিংয়ের পরেও সেটা তারা পারেনি।
বেচারা প্রীতি জিনতা!একটা শিরোপার জন্য কি করতে বাকি রেখেছেন তিনি?এবারের প্লেয়ার ড্রাফ্টে দেদার টাকায় কিনেছেন খেলোয়ার ও কোচিং ষ্টাফ।প্রায় প্রতি ম্যাচে মাঠে উপস্থিত থেকে দলকে উৎসাহিত করেছেন।কিন্তু এতো কাছে এসেও তাঁর খেলোয়াড়দের চাপের মুখে ভেঙে পড়া মানসিকতার জন্য কোলে উঠে এসে বসে থাকা ট্রফিটা খেলা শেষে কোহলিদের হাতেই দেখতে হলো।এমন সুযোগ আবার কবে আসবে, বা আদৌ আসবে কি-না তা কেবল সময়ই জানে।
Leave a Reply