1. mdmirhossainmolla.bd@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@banglarrup.com : Banglar Rup : Banglar Rup
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
চৌদ্দগ্রামে ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিল গালা ও উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টে অর্থদণ্ড গোপালগঞ্জে হামলাকারীদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা গোয়াইনঘাট প্রবাসী সমাজকল্যাণ পরিষদ নিয়ে ধূম্রজাল, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ র‌্যাবের অভিযানে ডিমলার চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার জলবায়ু অভিবাসিদের সাথে তাদের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধান বিষয়ক একটি কমিউনিটি গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষ: পুলিশের গাড়িতে আগুন, ইউএনওর গাড়ি বহরেও হামলা তাকিয়ে ছিলাম অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে উল্লাপাড়ায় কলেজ অধ্যক্ষের উপর হামলা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ বাকেরগঞ্জে দিনদুপুরে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রামজুড়ে উত্তেজনা তারেক রহমানকে কটুক্তির প্রতিবাদে কালীগঞ্জে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল

মাছ কম কাঁকড়া বেশি! জীবিকার নতুন খোঁজে উপকূলের জেলেরা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
  • ১১৮ বার

আ: রহিম গাজী/ রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগর ও উপকূলীয় নদ-নদীতে কমে গেছে মাছের প্রাপ্যতা। ফলে আয়-রোজগারে টান পড়েছে উপকূলের জেলেদের জীবনে। এ অবস্থায় বিকল্প জীবিকার খোঁজে অনেকেই ঝুঁকছেন কাঁকড়া শিকারে।

পটুয়াখালীর উপকূলের সাগর, নদী ও জঙ্গলের আশপাশের অল্প পানিতে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া। একসময় অবহেলিত এই জলজ প্রাণীটি এখন হয়ে উঠেছে জেলেদের জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের জেলে মো. সোহেল মৃধা বলেন, আগে সাগর আর নদীতে ইলিশ, পোমা ধরেই সংসার চলত। কিন্তু এখন দিনভর জাল ফেলেও মাছ মেলে না। মাছের অভাবে ঋণ বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই কাঁকড়া ধরছি। ভাগ্য ভালো থাকলে প্রতিদিন একেকটা কাঁকড়া ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

পটুয়াখালীতে কাঁকড়া শিকারে যুক্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি জেলে। এদের মধ্যে অনেকে আগে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কেউ কেউ কৃষিকাজ বা দিনমজুরের কাজ করতেন।

আড়ৎদার মো. সোনা মিয়া খলিফা বলেন, আগে মাছের ব্যবসা করতাম। এখন মাছ নেই, তাই কাঁকড়ার ব্যবসা করছি। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা কাঁকড়া ঢাকায় কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এসব কাঁকড়া পরে চায়না, হংকং ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।

জেলেরা জানান, যাদের ট্রলার নেই তারা ছোট নদী, খাল বা জঙ্গলে গিয়ে মাটির নিচ থেকে শাবল, লোহার রড ও দড়ি দিয়ে কাঁকড়া খুঁড়ে তোলেন। এরপর তা পানিতে পরিষ্কার করে স্থানীয় আড়তে বিক্রি করেন।

কাঁকড়ার চাহিদা ও লাভজনক বাজারের কারণে পটুয়াখালীর অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে কাঁকড়া শিকার শুরু করেছেন। দিন দিন এ পেশা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মাছের তুলনায় কাঁকড়া শিকারে জেলেদের ব্যস্ততা বেশি। তারা এখন অনেকটাই কাঁকড়ার ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশবান্ধব কাঁকড়া আহরণ ও সংরক্ষণে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি।

স্থানীয়ভাবে জানাগেছে, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া, মৌডুবি, চরইকরা, ছোটবাইশদিয়া, চরমোন্তাজ এবং কলাপাড়া উপজেলার অন্তত ৮০টির বেশি গ্রামে কাঁকড়া শিকার ও বিপণনের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে মানুষ যুক্ত। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকে এ পেশায় শ্রম দিচ্ছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাঁকড়ার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করতে পারে, যদি তা পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিতভাবে না পরিচালিত হয়।

শের ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাছের প্রজনন চক্র এবং খাদ্য চেইনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে অনেক প্রজাতির মাছের প্রাপ্যতা কমে গেছে। তবে কাঁকড়া তুলনামূলকভাবে সহনশীল প্রজাতি, যা খাপ খাইয়ে নিতে পারে নতুন পরিবেশগত পরিস্থিতির সঙ্গে। তাই এই মুহূর্তে কাঁকড়ার ওপর নির্ভরশীলতা একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। তবে এতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে আহরণে নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা এবং প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, কাঁকড়ার চাহিদা ও রপ্তানি সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে এ খাতকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে পারলে তা উপকূলীয় অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারে। একই সঙ্গে মাছের প্রাপ্যতা ফিরিয়ে আনতে জলাধার সংরক্ষণ, অতিরিক্ত আহরণ নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু সহনশীল মাছচাষেও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জলের নিচে যে কাঁকড়া ছিল কখনো উপেক্ষিত, সেই কাঁকড়া এখন জীবনের বড় ভরসা। রাঙ্গাবালীর উপকূলজুড়ে জেলেদের জীবনে কাঁকড়া এখন শুধু একটি জীবিকার উৎস নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে টিকে থাকার লড়াইয়ে এক নতুন আশার নাম। জলবায়ু পরিবর্তনের করাল ছায়ায় যেখানে মাছ হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কাঁকড়া হয়ে উঠছে জীবন ও অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তবে এই বিকল্প জীবিকা যেন দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয়, সেজন্য প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব আহরণ পদ্ধতি, সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। কাঁকড়া শিকার আজ যেমন জেলেদের মুখে হাসি এনেছে, তেমনি সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণই তা বজায় রাখতে পারে আগামীর দিনগুলোতেও।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews