মীর হোসেন মোল্লাঃ মাদক এখন আর শুধুই সীমান্তের সমস্যা নয়, এটি সমাজের শিরায় শিরায় ঢুকে পড়েছে। রাজধানীর কদমতলী ও শ্যামপুর থানা এলাকায় মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। দিনের বেলায় চাঁদাবাজি, রাতের বেলায় মাদকের বেচাকেনা চলে ভোর পর্যন্ত। এই এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট সরু। কোন কোন জায়গায় হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বেশিরভাগ এলাকায়। এর ওপর রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। সেখানে এমন কোন অপরাধ নাই যা ঘটে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখলাম, কদমতলী ও শ্যামপুর এলাকাটি যেন মাদকের স্বর্গরাজ্য। প্রতিটি গলিতে অল্প বয়সী তরুণদের ভিড়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এসব গলিতে মাদকের বেচাকেনা চলে। এলাকাবাসী বলেন, একেক জন ইয়াবা ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকার মালিক। তারা বলেন, এখানে প্রতি রাতে কয়েক কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হয়। ছাগলকান্ডে জড়িত এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউরের মতো টাকার মালিক এখানকার মাদক ব্যবসায়ীরা। সাধারণত সন্ধ্যার পর এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেউ আসেন না। তবে তারা গাড়ি নিয়ে বড় রাস্তায় থাকেন। মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ভাগের টাকা প্রতিদিন পৌঁছে দেন।
অন্যদিকে, একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে, তবু মাদক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমছে না, বরং তারা কৌশল বদলে আরো ছায়ার ভেতর কাজ করছে। অভিযানে ধরা পড়া অনেক মুখই চেনা। কেউ স্থানীয় প্রভাবশালী, কেউ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য। প্রশ্ন জাগে যখন প্রহরীই হয় চোর, তখন এই সমাজ যাবে কোথায়? অন্য খবর বলছে কীভাবে সমাজের নানা স্তরে, নানা পেশার আড়ালে গড়ে উঠছে মাদকের সাম্রাজ্য।রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ নৌপথে ইয়াবা পাচারে জড়িত, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল হয়ে উঠছে নতুন ট্রানজিট রুট। ছোট ছোট চালান এখন লাখ ছাড়িয়ে কোটি টাকার মুনাফায় পরিণত হচ্ছে। আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, এই চক্রে যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য পর্যন্ত।
পত্রিকা বিষয়টি আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতার দলিল হিসেবে দেখছে । মাদক এখন আর শুধুই সীমান্তের সমস্যা নয়, এটি সমাজের শিরায় শিরায় ঢুকে পড়েছে।
গৃহস্থ বাড়ির ভেতর, নামি স্কুল-কলেজের করিডরে, শহরের অ্যাপার্টমেন্টে, মফস্বলের মেঠোপথে— সবখানেই মাদকের অস্তিত্ব বিরাজমান। যাদের ধরা হচ্ছে তারা বেশির ভাগই ‘চুনোপুঁটি’। রাঘব বোয়ালরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে মাদক বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে আবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুরিকাঘাতে নুরুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দুইজন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সৈয়দুল আমিন প্রকাশ কালা সোনা মিয়া নামে এক যুবককে আটক করেছে উখিয়া থানা পুলিশ।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভোরে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নুরুল ইসলামের। এর আগে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২/ ই সংলগ্ন আমগাছতলা এলাকায় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
প্রতিদিনই ইয়াবার চালান নিয়ে ধরা পড়ছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। এই বেআইনি কাজ ঠেকাতে না পারায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশাল এ রোহিঙ্গা গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে বিপাকে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইয়াবার করালগ্রাসে পড়ে ধ্বংসের মুখে পড়ছে কক্সবাজার জেলাসহ আশপাশের যুবসমাজ। যুবসমাজকে এ বিপর্যয় থেকে রক্ষায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সচেতন মহল।
সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু অক্ষত থেকে যায়। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মাদক ব্যবসা থামবে না। আর মাদকের বিস্তার রোধ করতে না পারলে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করা যাবে না। লেখকঃ মীর হোসেন মোল্লা (আরমান)/ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।
Leave a Reply