কালিগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুর কালীগঞ্জের কালীগঞ্জ পৌরসভার দুর্বাটি এলাকার মাদক সম্রাট মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩৮) মসজিদে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছিলেন আর মাদক ব্যবসা করবেন না। কিছুদিন সেই শপথ রক্ষা করলেও এবার নেমেছেন পুরোদমে। গ্রামের কৃষকদের বানিয়েছেন বিক্রেতা, গাড়ির চালকদের বানিয়েছেন বাহক, তরুণদের বানিয়েছেন গ্রহিতা আর নিজে হয়েছেন মাদকের সম্রাট। স্থানীয়রা এর প্রতিকার চাইলেও উপর মহলকে ঠিক ম্যানেজ করে দেদারছে চালাচ্ছেন নিজের মাদক ব্যবসা।
অভিযুক্ত মাদক সম্রাট মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩৮) উপজেলার দুর্বাটি এলাকার মৃত মো. হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি করে সাবেক কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ মোমেনের সহযোগীতায় জুমার নামাজের আগে মসজিদে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছিলেন নিজেকে আর মাদকের ব্যবসায় জড়াবেন না। ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ তার দেওয়া কথা বিশ্বাস করে তাকে সংশোধনের সুযোগও করে দিয়েছিল। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাখাওয়াত তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে ব্যাবসার পরিধি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। আগে শুধু নিজ এলাকাতে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করলেও এখন সে পাশ্ববর্তী সকল উপজেলায় মাদক সরবরাহ করছে বলেও জানান এলাকাবাসী।
সাখাওয়াত হোসেনের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত দুর্বাটি এলাকার আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার ছেলে হৃদয় ভূঁইয়া এবং একই এলাকার মৃত মো. মোশারফ হোসেনের ছেলে বিদেশ ফেরৎ প্রবাসী মো. মোফাজ্জল হোসেন। তারা প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে স্থানীয় মাদকসেবীদের কাছে মাদক সরবরাহ করছে। আর এতে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
জানা গেছে, পৌর ১নং ওয়ার্ডের দুর্বাটি ও বাঙ্গালহাওলা এলাকার প্রায় ১৩টির বেশি স্পটে বিক্রি হচ্ছে মাদক। স্পটগুলো হলো, বাঙ্গালহাওলা ব্রিজের পূর্ব পাশের তমির ভিটা ও এর আশপাশ, গণি মিয়ার পুকুর পাড়, বাঙ্গালহাওলা সাধুর হাট, তুমিলিয়া রেল ব্রিজ, বাঙ্গাল হাওলা খ্রিস্টান পাড়ার একাংশ, দুর্বাটি ঈদগাহ সংলগ্ন শিমুলতলা, দুর্বাটি ফকির বাড়ি, দুর্বাটি উত্তর পাড়ার একাংশ, দুর্বাটি উত্তরপাড়া সংলগ্ন ফারুক চেয়ারম্যনের সড়ক, মাদক কারবারী হৃদয় ভূঁইয়ার নিজ বাড়ি, দুর্বাটি বৈরাইলের টেক এলাকার একাংশ, দুর্বাটি মাদ্রাসা মোড়। এসব স্পটে ইয়াবা, গাঁজা এবং চোলাইমদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য প্রকাশ্যেই সাখাওয়াতের নেতৃত্ত্বে বিক্রি করছে তার সহযোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানিয়েছেন, মাদকের ব্যপারে সোচ্চার হলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তার শিকার করা হয়, দেখানো হয় নানারকম ভয়ভীতি।
সন্ধ্যার পর থেকে প্রতিটি স্পটে মাদকসেবীদের আনাগুনা বেড়ে যায়। স্থানীয়রা কয়েকদিন সেসব স্পটে পাহাড়ার ব্যবস্থা করলেও তাতে তেমন সুফল আসেনি। এদিকে এ ব্যপারে প্রশাসন যেন নির্বিকার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদকসেবী সন্তান মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেরে তার বাবার একমাত্র সম্বল গোয়ালের গরু নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। স্ত্রীর জমানো টাকা না দেওয়ায় মাদকাসক্ত স্বামী পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে স্ত্রীকে। এছাড়াও ঐ এলাকা এবং তার আশেপাশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সাখাওয়াত মসজিদে দাঁড়িয়ে এলাকার মুসল্লিদের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, সে আর এসব কাজ করবেনা। কিন্তু সে তার কথা রাখেনি। এখন তার জন্য আমরা আত্নীয় স্বজনের কাছে মুখ দেখাতে পারিনা। যেখানে যাই সেখানেই বলে আমরা মাদক কারবারীদের এলাকার লোক। মান-সম্মান আর কিছুই রইলো না।
অপর ব্যাক্তি জানান, সাখাওয়াত, মোফাজ্জল এবং হৃদয় এই এলাকায় মাদকের বিস্তার ঘটিয়েছে। তারা কাউকেউ তোয়াক্কা করেনা। এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারাও হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। এ থেকে এলাকাবাসী পরিত্রাণ চায়।
এ ব্যাপারে পৌর ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ মোমেন বলেন, আমি জনসচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে প্রতিটি মসজিদে মাদকের ভয়াবহতা এবং তা বন্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি উঠান বৈঠক করার। সাখাওয়াতকে মাদক ব্যবসা থেকে সরিয়ে আনার জন্য যা যা করণীয় তার সবই করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে মসজিদে দাঁড়িয়ে কথা দিয়েও তা রক্ষা করেনি। আমরা চাই আইন প্রশাসন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, আমরা তাদের পূর্ণ সহযোগীতা করবো।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, মাদকের ব্যপারে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অভিযান আমি পরিচালনা করেছি। বিষয়টি আগে জানা ছিলো না অভিযুক্তদের ব্যপারে খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমরা স্থানীয়দের আশ্বস্ত করতে চাই, থানা প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। মাদক কারবারী যতই শক্তিশালী হউক তাদের নির্মুল করা হবে।
মোঃ ওমর আলী মোল্যা
মোবাইল -০১৭২৯৮৩৭৮৯৩
কালীগঞ্জ- গাজীপুর।
Leave a Reply