বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি: বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেয়ার ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা, ঈমানদার জনগণের হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এই জঘন্য ঘটনায়। এর প্রতিবাদে শনিবার দিনব্যাপী থানা ঘেরাও, সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের বেবাজ গ্রামের বাসিন্দা সৌরভ দত্ত নামের এক যুবকের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে। অভিযুক্ত সৌরভ দত্ত তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর ও অশ্লীল মন্তব্য ছড়ায়, যা মুহূর্তেই স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা রাতেই রাস্তায় নেমে আসে।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত শত শত মানুষ বাকেরগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এরপর সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে সড়ক অবরোধ করে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে স্থানীয় জনগণ। এতে উভয় দিক থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে এবং সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, এমন অবমাননাকর কর্মকাণ্ড মুসলমানদের বিশ্বাসে সরাসরি আঘাত হানে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম, হাফেজ, আলেম, ছাত্র, যুবক, বৃদ্ধ—সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন। তাদের বক্তব্য ছিল পরিস্কার—বিশ্বনবীর সম্মান রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত এবং অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে।
বিক্ষোভ চলাকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তন্ময় হালদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনায় বসেন। তিনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল দাবি বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
এদিকে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, অভিযুক্ত সৌরভ দত্তকে শুক্রবার রাতেই আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রশাসন দাবি করে, আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে তার যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
বিক্ষোভকারীরা থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও এসআই তোফাজ্জেল হোসেনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের দাবি জানান। তারা প্রশাসনকে বিকেল ৫টার মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের আল্টিমেটাম দেন এবং তা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
এই আন্দোলনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাব বা নেতৃত্ব ছিল না। এটি ছিল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ববোধ থেকে সৃষ্ট স্বতঃস্ফূর্ত গণপ্রতিক্রিয়া। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে প্রমাণ করেছেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মর্যাদা ও সম্মান মুসলমানদের কাছে জীবনের চেয়েও অধিক মূল্যবান।
ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, রাসূল (সা.)-এর অবমাননার শাস্তি শুধুমাত্র দুনিয়ার আইনে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং তা হওয়া উচিত এমন দৃষ্টান্তমূলক যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের স্পর্ধা দেখাতে সাহস না করে। তারা মনে করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত, অতএব মহানবী (সা.)-এর সম্মান রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
প্রতিবাদী মুসলমানরা প্রশাসনের উপর আস্থা রেখে এই মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ফিরে গেলেও, অভিযুক্তের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
Leave a Reply