মনজুর এলাহী তপন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শভিত্তিক দলবদল এখন খুব একটা দেখা না গেলেও সম্প্রতি পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির প্রবীণ নেতা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। ২০২৫ সালের ৬ মে তিনি বরিশালের চরমোনাই দরবারে উপস্থিত হয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমিরের হাতে বাইআত গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন।
তিনি দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে তিনি রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক আদর্শ ও জাতীয় ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘদিন ভাবনার পর তিনি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেন। তার মতে, দেশে একটি আদর্শভিত্তিক পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে এবং ইসলামী আন্দোলন সেই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজের এই পদক্ষেপকে স্থানীয় রাজনীতি এবং জাতীয় পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক ভিত্তি ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হতে পারে। তার অভিজ্ঞতা ও গ্রহণযোগ্যতা দলের কার্যক্রমে নতুন গতি আনতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে ১৩ মে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয় যে, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে দলের সকল পর্যায়ের পদ থেকে এবং প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও তিনি নিজের ইচ্ছায় বিএনপি ত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দিয়েছেন, তথাপি এই বহিষ্কারের ঘোষণা অনেকের কাছে অপ্রয়োজনীয় ও প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি মূলত দলীয় অবস্থান রক্ষার একটি প্রচেষ্টা। একজন নেতা যদি নিজ উদ্যোগে দল ত্যাগ করেন, তাহলে পরে তাকে বহিষ্কার করার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। বরং এমন ঘোষণায় দলীয় সংকোচ এবং অস্বস্তি স্পষ্ট হয়ে পড়ে।
জনগণের প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে, অনেকে এই দলবদলকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, একজন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ নিজের শেষ সময়ে নীতিনিষ্ঠ একটি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছেন, এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। অন্যদিকে, বিএনপির কিছু সমর্থক এটিকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন, যদিও বাস্তবতা হলো – দীর্ঘদিন সক্রিয় না থাকা একজন নেতার দলবদল দলের ওপর প্রভাব ফেলে না, বরং বড় দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাই এতে প্রকাশ পায়।
সার্বিকভাবে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের দল পরিবর্তন ও ইসলামী আন্দোলনে যোগদান বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শ, নৈতিকতা ও ইসলামি চেতনার পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দেয়। এটি প্রমাণ করে যে, এখনো মানুষ আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখে এবং নতুন কিছু চায়। একইসাথে এটি বড় দলগুলোর জন্য একটি বার্তা—জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হলে আদর্শ ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপসহীন থাকতে হবে।
Leave a Reply