কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ নিখোঁজ হওয়ার ৭০ দিন পরও সন্ধান মিলেনি মাদ্রাসার ছাত্র নাজিম উদ্দিনের। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়ন কাদৈর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মোঃ নাজিম উদ্দিন (১৫) গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হয়। জেলার দেবীদ্ধার থানার উনঝুটি এলাকায় অবস্থিত মোজাম্মেল হক নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যয়নরত একজন মেধাবী ছাত্র মোঃ নাজিম উদ্দিন। নিখোঁজ হওয়ার ৭০ দিন ফেরিয়ে গেলেও সন্ধান মিলেনি তার। কি অবস্থা আছেন-? কেমন আছেন-? এবং কোথায় আছেন এই টেনশনে মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন নাজিমের গর্ভধারণি মা মোসাঃ নাজমা বেগম সহ পরিবারের লোকজন।
জানা যায়, গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি শনিবার দেবিদ্বার থানার উত্তর গুনাইঘর ইউনিয়নের উনঝুটি এলাকা থেকে মোঃ নাজিম উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে, দেবিদ্বার থানা একটি জিডি করে (যাহার নং ৬২৯)। দেবিদ্ধার থানার পুলিশের পরামর্শে চৌদ্দগ্রাম থানায় একই ইউনিয়নের কাদৈর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। কোন প্রতিকার না পেয়ে বারবার আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে কখনো দেবিদ্বার থানায় কখনো চৌদ্দগ্রাম থানা আবার কখনো কুমিল্লা র্যাব-১১ ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে গত ২০ শে মার্চ কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন টার্মিনাল-১ এর আদালতে মোসাঃ নাজমুল বেগম (৩৮) বাদী হয়ে শুভপুর ইউনিয়ন কাদৈর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে মোঃ সোহাগ মিয়া (৩০) এর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন (যাহার নং সিপি- ২১১)।
মামলার সূত্র জানায়, অভিযুক্ত সোহাগ ঘটনার দিন শনিবার সকাল প্রায় ৯টার সময় নিখোঁজ নাজিম উদ্দিনকে “উনঝুটি মোজাম্মেল হক নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা” নিয়ে যেতে স্বেচ্ছায় তার মা নাজমা বেগমের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে। নাজমা বেগম অভিযুক্ত সোহাগের কথা বিশ্বাস করে আশ্বস্ত হয়ে, সরল মনে নাজিমকে তার সাথে মাদ্রাসায় পাঠায়। উল্লেখ্য যে, নাজিমকে পাঠানোর পূর্বে উনঝুটি গিয়ে মাদ্রাসার দারোয়ান অথবা হুজুরের হাতে নাজিমকে বুঝিয়ে দেয়ার পর নাজমা বেগমকে ফোন দেয়ার কথা থাকলেও- প্রতিবেশী সোহাগ তা না করে তার ফোনটি বন্ধ করে দেয়। টেনশনে দিশেহারা নাজমা বেগম। নাজিম মাদ্রাসায় গিয়েছে কিনা জানার জন্য মাদ্রাসার হুজুরকে ফোন করলে, প্রতিউত্তরে সে মাদ্রাসায় যায়নি বলে জানিয়েছেন। একপর্যায়ে নাজমা বেগম দেবিদ্বার থানার বিভিন্ন এলাকার আনাছে কানাছে এবং সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে তার ছেলেকে না পেয়ে, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানা একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযুক্ত বিবাদী মোঃ সোহাগের কথাবার্তা ও চালচলনে সন্দেহ সৃষ্টি হলে, এলাকার লোকজনসহ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সোহাগ একেক সময় একেক রকম তথ্য প্রদান করে আসছে।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত সোহাগের বাবা এবং চাচাদের সাথে নিখোঁজ মাদ্রাসার ছাত্র নাজিমের পরিবারের পূর্বের জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে মাদ্রাসার ছাত্র নাজিমকে মাদ্রাসায় পৌঁছানোর কথা বলে- অজ্ঞাতনামা লোকজন দিয়ে অজ্ঞাতস্থানে অপহরণ করে আটক রেখেছে বলে পরিবারের ধারণা করছেন। এ বিষয়ে মামলা তদন্তকারী অফিসারের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, আদালত ভিকটিমকে উদ্ধারের আদেশ দিয়েছেন। নাজিম উদ্দিন কে উদ্ধার করার জন্য মামলার অভিযুক্ত বিবাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। পাশাপাশি উদ্ধারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
Leave a Reply