নিজস্ব প্রতিবেদক: মিরপুরের পল্লবী থানা সংলগ্ন এলাকায় মাদকের অবাধ বিস্তার এবং অপরাধের ঊর্ধ্বগতি স্থানীয়দের মাঝে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেলেও, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা।
অপরাধের অভয়ারণ্য পল্লবীঃ পল্লবীর হারুন মোল্লা ঈদগাহ মাঠ, স্টেশন সড়ক, কালসী রোড, সিরামিক রোড, মেট্রোরেলের নিচের অংশ, দেওয়ানপাড়া স্টিল ব্রিজ, বাউনিয়াবাদ ১৪ তলা ও বাইশতলা গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন এলাকা অপরাধীদের দখলে চলে গেছে। দিনের আলোয়ও এখানে মাদক ও ছিনতাইকারীদের অবাধ বিচরণ।
মাদক সাম্রাজ্যের মূল হোতারা কারা? স্থানীয়দের অভিযোগ, থানার মাত্র ১০০ গজের মধ্যেই চলছে মাদক কারবার, যার নেতৃত্বে রয়েছে কুখ্যাত মাদক সম্রাজ্ঞী সাজাদী ও তার স্বামী রনি। তাদের সহযোগীরা হল বোন বেলি ও তার স্বামী টুনা, কাজল ও তার স্বামী আশিক। এরা শুধু ব্যবসা চালায় না, নিজেরাও মাদকাসক্ত।
এছাড়া, সাজাদীর ভাই আসলাম ও তার ছেলে রাজন পুরো মাদক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক। তাদের সঙ্গে কাজ করে গেচু রমজান, বাদশা বাবু, ইসলাম, তার ছেলে রিফাত, পাগলা কালাম, মনু, ছনু, শাহাবুদ্দিনসহ আরও অনেকে।
মাদক ব্যবসা থেকে আসা অর্থ গোলাপ নামে এক নারীর কাছে বস্তা ও ব্যাগ ভর্তি করে রাখা হয়। অপরাধীদের এই নেটওয়ার্কে কালুর স্পটের আমজাদ, তার স্ত্রী আছিয়া, মেয়ে শারমিন, শারমিনের ভাই আলমগীর ও বিপ্লবও মূল ভূমিকা রাখছে। বাইশতলার পিছনে আদর্শ নগরের মাদক সম্রাজ্ঞী শাহিনুর ও চম্পা তাদের রয়েছে ৫০ জনের সেলম্যান। অনেক টা প্রকাশ্যে তারা মাদক ব্যবসা করে আসছে। কদিন আগে শাহিনুর ও তার ভাই আলমগীর মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে গুলিবিদ্ধ হয়।
নারী পাচার চক্রের দৌরাত্ম্যঃ পল্লবীতে শুধু মাদকই নয়, নারী পাচারেরও শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। নাগিন সোহাগ ও তার মা বিথি সুন্দরী মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করছে। তাদের সঙ্গে কাজ করছে কাল্লু মামা ও আরও কয়েকজন।
অপরাধীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়াঃ সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের অবস্থানও পাল্টাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেকে গা ঢাকা দিলেও, এখন বিএনপির কিছু নেতার আশ্রয়ে নতুন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
প্রতিবাদ করলেই মৃত্যু ঝুঁকিঃ এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বললেই হামলা, ছুরিকাঘাত বা খুনের হুমকি দেওয়া হয়। কিশোর গ্যাংরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা, লুটপাট, জমি দখলসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করছে।
পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধঃ পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম ২৬ ফেব্রুয়ারি এক উঠান বৈঠকে সতর্কবার্তা দিলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ফলে অপরাধীরা আগের মতোই সক্রিয়।
জনসাধারণের দাবিঃ ১. মাদক চক্র ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা।
২. ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পুলিশের টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি।
৩. জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী ভূমিকা নিশ্চিত করা।
প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, স্থানীয়রা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
Leave a Reply