বিশ্বজিৎ চন্দ্র সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি: চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চরম ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়টির ২০ জন পরীক্ষার্থীর কেউই পাস করতে পারেনি।
১০ জুলাই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে উঠে আসে এই দুঃখজনক চিত্র। এমন ব্যতিক্রমী ফলাফল এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কেউই সব বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তিনজন একটি বিষয়ে, পাঁচজন দুই বিষয়ে, সাতজন তিন বিষয়ে, একজন চার বিষয়ে এবং একজন শিক্ষার্থী সব বিষয়ে ফেল করেছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
শ্রীপুর গ্রামের এক অভিভাবক রমেশ মণ্ডল অভিযোগ করেন,
“শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসেন না। কেউ কেউ বেলা ১১টার দিকে এসে শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান, আবার কেউ চায়ের দোকানে আড্ডা দেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকরাও একই রকম উদাসীন।”
অন্যদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু বিশ্বাস জানান,
“আমাদের বিদ্যালয়ে বর্তমানে সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। এটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্বীকৃত হলেও ২০০০ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আশেপাশে উন্নত বিদ্যালয় থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা অন্যত্র চলে যায়। যারা এখানে পড়ে, তারা সাধারণত দরিদ্র পরিবারের এবং তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিতও আসে না এবং অভিভাবকদের আগ্রহও অনেক কম। এসব কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে।”
এই ফলাফলের পর স্থানীয়ভাবে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন, প্রশাসনিক নজরদারি ও শিক্ষক মূল্যায়নের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
সচেতন মহলের প্রশ্ন—শুধু দরিদ্রতা বা শিক্ষার্থীদের মেধাহীনতাই কি ব্যর্থতার কারণ, নাকি বিদ্যালয় পরিচালনার দুর্বলতাও সমানভাবে দায়ী?
এখন দেখার বিষয়, শিক্ষা কর্তৃপক্ষ এই ব্যর্থতা থেকে কী শিক্ষা নেয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
Leave a Reply