চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি
মাইনুদ্দিন মাসুদ
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তরুণদের সহায়তায় গাঁজাসহ জাফর নামে এক যুবককে আটক করার ঘটনায় ক্ষীপ্ত হয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিটিয়ে একজনকে গুরুতর আহত করেছে। আহত তরুণের নাম আবদুর রহমান ফয়সাল। তিনি উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের ডিমাতলী গ্রামের দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে। এ ঘটনায় দ্বীন মোহাম্মদ বাদি হয়ে মাদক ব্যবসায়ী জাফর ড্রাইভার, আবদুল মমিন ও জিসানের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। সোমবার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চিওড়া ইউনিয়নসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মাদক সরবরাহ করে আসছিল ডিমাতলী গ্রামের মৃত আবদুল হালিম ভান্ডারীর ছেলে আবদুল মমিন, মৃত আবদুল মজিদের ছেলে জাফর ড্রাইভার ও ঘোষতল গ্রামের রমিজ উদ্দিনের ছেলে জিসান। শুক্রবার রাতে ডিমাতলী মসজিদের সামনে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ঘোষতল গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে জাফরকে আটকে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে স্থানীয় তরুণরা। গাঁজাগুলো ছিল মাদক ব্যবসায়ী আবদুল মমিনের। জাফর গাঁজা পাচার শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিল। গাঁজাসহ জাফরকে আটক করায় ক্ষীপ্ত হয়ে পরদিন শনিবার সকালে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী আবদুল মমিন, জাফর ড্রাইভার ও জিসান চিওড়া রাস্তার মাথায় তিশা বাস কাউন্টারে আবদুর রহমান ফয়সালের উপর অতর্কিত হামলা করে। এক পর্যায়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে সমস্ত শরীরের মধ্যে নীলাফুলা কালোদাগযুক্ত ও থেতলানো জখম করে। ওই সময় ফয়সালের শোর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে তাকে রক্ষা করে। উপস্থিত লোকজন গুরুতর আহত ফয়সালকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাক্ষ্য কমপ্লেক্স জরুরী বিভাগে ভর্তি করে। খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ীরা হাতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ফয়সাল ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাফর ড্রাইভার সম্প্রতি চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটকের পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করে। সে গণঅভ্যুথানের আগে কয়েক বছর পুলিশের ডিউটি গাড়ি চালাতো। অপরদিকে আবদুল মমিন ও জিসান এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত। রাজনৈতিক ছাত্রছায়ায় তারা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাদের কারণে এলাকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীসহ যুব সমাজ ধ্বংসের পথে। এছাড়া সীমান্ত এলাকার অনেক যুবক তাদের প্রলোভনে পড়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে বেড়েছে সামাজিক অবক্ষয়। শিগগিরই তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সীমান্তবর্তী এলাকার সচেতন কয়েকজন বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে রাতে ঠিকমতো রাস্তায় চলাচল করতে ও ঘরে ঘুমাতে পারি না। সীমান্ত এলাকা থেকে মহাসড়ক খুব কাছে হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা সুজাতপুর, ডিমাতলী ও কেছকিমুড়া এলাকায় নির্বিঘ্নে মাদক পাচার করে। তাছাড়া প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি অবৈধ এ কাজে সহযোগিতা করছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা উৎকোচ নিয়ে শেল্টার দেয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অপরদিকে মাদক বিরোধী তরুণদের আরও সোচ্চার হওয়ার আহবান সচেতন মানুষের।
হামলার শিকার ফয়সালের পিতা দ্বীন মোহাম্মদ সোমবার বলেন, চিকিৎসা শেষে ফয়সালকে সোমবার সকালে বাড়িতে নিয়ে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
সোমবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হামলার শিকার ফয়সালের পিতা দ্বীন মোহাম্মদ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে’।
Leave a Reply