নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতির মূল চরিত্র দুইটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। স্বাধীনতার পর থেকে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং প্রতিযোগিতা চলে আসছে, তার অন্যতম বড় উপাদান ক্ষমতায় থাকার ও ফেরার লড়াই। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় থাকে না, তখন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, আন্দোলন ও কৌশলে প্রাধান্য পায় ক্ষমতায় ফেরার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষাকে অনেকে ক্ষমতার লোভ বলে চিহ্নিত করেন।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এই লোভকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হন। তারা এটিকে জনসাধারণের কাছে একটি বার্তা হিসেবে তুলে ধরেন যে বিএনপি-জামায়াতের মূল লক্ষ্য রাষ্ট্র পরিচালনার সংস্কার নয়, বরং ক্ষমতা দখল। এই বার্তা আওয়ামী লীগের জন্য একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার।
ক্ষমতার লোভ:০১
স্বাধীনতার পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা
১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক শাসন, সামরিক শাসকদের রাজনৈতিক দলে রূপান্তর এবং ক্ষমতার জন্য পাল্টাপাল্টি কৌশলের ইতিহাস রয়েছে। বিএনপি গঠিত হয় ১৯৭৮ সালে, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। শুরু থেকেই বিএনপির রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
৯০-এর দশকের পর ক্ষমতার দোলাচল,
১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পালাক্রমে ক্ষমতায় আসে। প্রতিবারই দেখা যায়, বিরোধী দলে থাকাকালে উভয় পক্ষ তীব্র আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ ও কখনো সহিংস কর্মসূচি নেয়। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন বেশ কয়েকবার সহিংস রূপ নিয়েছে, যা “ক্ষমতার লোভ” ধারণাকে শক্তিশালী করেছে।
বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল ও ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা
নির্বাচনকেন্দ্রিক লড়াই
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকে। এ সময়ে তারা একাধিকবার সরকারবিরোধী আন্দোলন করে, তবে তা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন এবং পরবর্তী সময়ে সহিংস কর্মসূচি তাদের জনসমর্থন ক্ষয় করেছে।
সহিংসতা ও জনমতের খারাপ প্রভাব পড়ে।
২০১৫ সালের অবরোধ ও পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ এটিকে তাদের প্রচারে ব্যবহার করে দেখিয়েছে যে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ফেরার জন্য যেকোনো পর্যায়ে যেতে প্রস্তুত।
ক্ষমতার লোভ:০২
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সুবিধা:
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন সহিংস হলে, সাধারণ জনগণের একাংশ নিরাপত্তার স্বার্থে আওয়ামী লীগকেই সমর্থন দেয়। শেখ হাসিনা এ অবস্থাকে রাজনৈতিক সুবিধায় রূপান্তর করেছেন।সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে আন্তর্জাতিক মহলেও বিএনপি-জামায়াতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শেখ হাসিনার সরকার নিজেকে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ও উন্নয়নমুখী হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়।যদি কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে থেকেও গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, তবে সেটি ইতিবাচক ধারা। কিন্তু যদি দলটির কর্মকাণ্ড এমন হয় যে জনগণ মনে করে তাদের লক্ষ্য শুধুই ক্ষমতায় ফেরা, তবে সেই দলের প্রতি আস্থা কমে যায়।
বিএনপি-জামায়াত যদি তাদের রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন না করে এবং শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মনোযোগী থাকে, তবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তবে যদি তারা গণতান্ত্রিক সংস্কার, নীতিনির্ভর রাজনীতি ও ইতিবাচক কর্মসূচি গ্রহণ করে, তখন পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতায় ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং সেটি ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংসতা বা অস্থিতিশীলতা শেখ হাসিনার জন্য একটি রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এটি কেবল ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা নয় এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জনআস্থা, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন।
Leave a Reply