চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে লাইভে রেখে মো: রুমন (৩৫) নামে ওমান প্রবাসী চৌদ্দগ্রামের এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় ওমানের সালালাহ এলাকায়। ওমান থেকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন নিহত রুমনের ভায়রা ভাই মো: ওবায়দুল হক। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ইশানচন্দ্র নগর গ্রামে নিহত প্রবাসীর বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
সরজমিনে নিহতের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯ বছর পূর্বে পারিবারিক পছন্দে খালাতো বোন পান্না আক্তারকে বিয়ে করেন রুমন। বিয়ের চার মাস পর জীবিকার তাগিদে রুমন ওমান চলে যান। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রুমনের স্ত্রী নিজ পছন্দে বাবার বাড়িতে অবস্থান করতে থাকে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যতা সৃষ্টি সহ পারিবারিক কলহ বাধে। গত শনিবার রুমন স্ত্রী পান্না আক্তারের সাথে লাইভ ভিডিও কলে একটি ভিডিও নিয়ে ঝগড়া করেন। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রুমন নিজ শয়নকক্ষ থেকে রশি নিয়ে গিয়ে পাশের একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে গিয়ে স্ত্রীকে লাইভে রেখেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এ বিষয়ে রুমনের স্ত্রী পান্না আক্তার জানান, ‘আমাকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করছে দেখে লাইভ কল কেটে একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করা আমার মামাতো বোনের স্বামী ওবায়দুল হককে বিষয়টি জানাই। তিনি সেখানে গিয়ে আমার স্বামীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে আমি উনার মাধ্যমে আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পারি।’ তবে যে ভিডিও নিয়ে ঝগড়ার ফলে রুমন আত্মহত্যা করেছে, তিনি সেই ভিডিওর কথা অস্বীকার করেন।
নিহত রুমনের মা জানান, ‘আমি শখ করে নিজ বোনের মেয়েকে পছন্দ করে ছেলেকে বিয়ে করাই। বিয়ের পর থেকেই তারা আলাদা থাকতো। আমাদের খোঁজখবরও নিতো না। লোকমুখে শুনি, আমার পুত্রবধূ পান্না আক্তার পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে গেছে। যদি এই কারণে আমার ছেলে আত্মহত্যা করে থাকে, আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার বিচার চাই।’
নিহতের ভাই আবদুল মমিন জানান, ‘বিয়ের পর আমার ভাই শ্বশুর বাড়িতে বসবাস শুরু করে। ভাইয়ের প্রবাসে থাকার সুযোগ নিয়ে ভাবী পান্না আক্তার স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল কাদেরের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তখন দলীয় দাপটের কারণে আমরা এ বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করতে পারিনি।’
ইশানচন্দ্র নগর গ্রামের চা দোকানদার লিটন মিয়া জানান, ‘আওয়ামী দলীয় প্রভাবের কারণে এলাকার ছোট ভাই রুমনের স্ত্রী পান্নাকে স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে সংশোধনে চেষ্টা করলে তার পরকীয়া প্রেমিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদের তাদেরকে বিভিন্ন রকম হুমকি-ধমকি দিত। ক্ষতির আশংকায় তখন আর কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চাইতো না।’
ওমান থেকে নিহতের ভায়রা ভাই মো: ওবায়দুল হক জানান, ‘ফুফাতো শ্যালিকা পান্না আক্তারের ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিক ওমানের সালালাহ এলাকায় গিয়ে দেখি একটি টিনশেড ঘরে রুমনের লাশ ঝুলছে। পরে সংবাদটি আমি দেশে রুমনের পরিবার সহ আত্মীয়-স্বজনদের জানাই।’
পরকীয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুল কাদের জানান, জমি সংক্রান্ত একটি বিরোধকে কেন্দ্র করে রুমনের এলাকার কতিপয় লোক আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। বিষয়টি নিয়ে তারাই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার মানহানী করতে এলাকায় এমন খবর ছড়িয়েছে।
Leave a Reply