মোঃ শফিকুল ইসলাম/ বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামা থানা পুলিশের এক অভিযানে ১৯৯১ সালের এক হত্যা মামলার আসামি সোনাইয়া ও প্রকাশ (বর্তমানে জাফর আলম) কে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। নিজ নাম এবং পরিচয় পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন ধরে আইনের চোখে ফাঁকি দিলেও শেষমেশ পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়েন সোনাইয়া।
১৯৯১ সালে লামা থানাধীন ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়নের মালুম্যা গ্রামে আব্দুস শুক্কুরকে পারিবারিক জমিবিরোধের জেরে হত্যার অভিযোগে তার ভাই আব্দুল আলিম, ভাতিজা সোনাইয়া, জহির ও জহিরের ভগ্নিপতি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে ১৯৯৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় । অভিযুক্ত আব্দুল আলিম ও সোনাইয়া প্রায় দুই বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হন। তবে আব্দুল আলিম পরবর্তীতে মারা যান এবং জহির ও নূর মোহাম্মদ দেশত্যাগ করেন।
নাম পরিবর্তনের কৌশলে ২০০৮ সালে সোনাইয়া জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম জাফর আলম এবং পিতার নাম আব্দুল আলিম উল্লেখ করে আইডি জালিয়াতি করেন। এভাবে তিনি মামলায় নিয়মিত হাজিরা দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং এলাকায় নতুন পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন । গত ১৫ বছর ধরে তিনি জাফর আলম নামে পরিচিত হলেও পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারিতে তার আসল পরিচয় ফাঁস হয়।
২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে লামা থানার সাব-ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মালুম্যা গ্রামের ডাকাত বাবুল শরীফকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে বাবুলের জামিন আবেদন করতে গিয়ে সোনাইয়া (জাফর আলম) পুলিশের সন্দেহের টার্গেটে পরিণত হন। প্রথমে তিনি জাল পরিচয় দিয়ে রক্ষা পেতে চাইলেও পুলিশের তদন্তে তার আসল পরিচয় উদ্ঘাটিত হয় ।
লামা থানার ওসি জানান, নাম পরিবর্তন করলেও ফরেনসিক প্রমাণ ও স্থানীয় সূত্রের ভিত্তিতে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের আইটি সেল ও নাগরিক ডাটাবেসের সহায়তায় এমন জালিয়াতি ধরা সহজতর হয়েছে ।
নাম পরিবর্তন করে আইন ফাঁকি দেওয়ার এমন ঘটনা নতুন নয়। ২০২২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বদলে আত্মগোপনে থাকলেও র্যাবের হাতে ধরা পড়েন ।
, দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আসামিরা প্রায়ই জাল কাগজপত্র ব্যবহার করেন, কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও পুলিশের ডিজিটাল ডাটাবেসের কারণে তা এখন আর কার্যকর নয়।
সোনাইয়াকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
নাম-পরিবর্তনের মাধ্যমে বিচার এড়ানোর চেষ্টা ক্রমশ অকার্যকর হয়ে উঠছে। পুলিশের আধুনিক তদন্ত পদ্ধতি ও জনগণের সচেতনতাই এর মূল কারণ। এই ঘটনা প্রমাণ করে, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দীর্ঘমেয়াদি মামলাতেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Leave a Reply