মোঃ শফিকুল ইসলাম/ বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ২৯ জুলাই লামাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত মানববন্ধনের পরদিন, ৩০ জুলাই, তিনি এক ব্যতিক্রমী প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে নিজের দায়মুক্তির আবেদন জানান। তবে লামাবাসীর কাছে তার এই প্রচেষ্টা ‘কালো টাকা’ সাদা করার এবং দুর্নীতির দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।গত ২৯ জুলাই লামা উপজেলা পরিষদের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শত শত সাধারণ মানুষ গৌতম চৌধুরীর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিদ্যুৎ সংযোগে হয়রানি, অতিরিক্ত বিল আদায়, নতুন সংযোগের নামে ঘুষ গ্রহণ এবং বিদ্যুৎ অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্নীতির মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। লামাবাসীর অভিযোগ, গৌতম চৌধুরী তার পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন, যার ফলস্বরূপ এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।প্রেস ব্রিফিংয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা ও জনমনে সন্দেহ মানববন্ধনের প্রতিক্রিয়ায় তড়িঘড়ি করে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গৌতম চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি লামা অফিসে যোগদানের মাত্র তিন মাসের মধ্যে তার অফিসের কম্পিউটার ম্যান সালাউদ্দিনের নানা অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার কারণেই তার বিরুদ্ধে এই মানববন্ধন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সালাউদ্দিন তার নিজের ঘরে বিদ্যুৎ লাইন ও মিটার অফিস থেকে চুরি করে ব্যবহার করছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় আদালতে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া সালাউদ্দিনকে বিদ্যুৎ অফিসের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য অফিস থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।তবে তার এই বক্তব্য লামাবাসীর কাছে বিন্দুমাত্র বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। উল্টো, তার এই পদক্ষেপকে দুর্নীতি থেকে বাঁচার একটি নির্লজ্জ চেষ্টা হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। উদ্বেগের বিষয়, এই প্রেস ব্রিফিংয়ে কিছু স্থানীয় সাংবাদিকের উপস্থিতি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
কক্সবাজারের রামুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী থাকাকালীন গৌতম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এর আগেও রাজস্ব আত্মসাৎ, গ্রাহক হয়রানি ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তাকে লামা উপজেলায় বদলি করার পর থেকেই লামার বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় নানা সমস্যা ও অনিয়মের অভিযোগ বাড়ছে বলে স্থানীয়দের দাবি।লামাবাসীর দাবি ও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বক্তারা অবিলম্বে লামা উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, ভূতুড়ে বিল বাতিল করে সঠিক বিল প্রণয়ন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সকল অনিয়ম বন্ধের দাবি জানান। অন্যথায়, বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যাশা
এই ঘটনা লামা উপজেলায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, শুধুমাত্র দায়মুক্তির আবেদন বা প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। লামাবাসী আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত গৌতম চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো স্বচ্ছভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কঠোরভাবে বজায় রাখবে।
Leave a Reply