আ: রহিম গাজী/ রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা : পটুয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা দুই দিন ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় অন্তত দুই লাখ মানুষ এখন ‘দ্বীপে বন্দি’ অবস্থায় পড়েছেন। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত না করতে পারায় তৈরি হয়েছে চরম ভোগান্তি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা মূলত সমুদ্র ও নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপাঞ্চল। উপজেলার সঙ্গে মূল ভূখণ্ড গলাচিপা কিংবা কলাপাড়া হয়ে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল জলপথ। কিন্তু মঙ্গলবার বুধবার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ। এরপর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একটানা বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেটি আর চালু হয়নি। যার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে এখানকার বাসিন্দারা।
বিশেষ করে রাঙ্গাবালীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা নিতে কিংবা বড় ধরনের অসুস্থতায় রোগীদের পটুয়াখালী বা গলাচিপা নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় নৌযান বন্ধ থাকায় সেই পথও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দূরবর্তী এ চরের অনেক পরিবার।
রাঙ্গাবালীর বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. কাশেম মিয়া বলেন, “গতকাল আমার ছোট ভাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু কোনো স্পিডবোট বা ট্রলারই পাওয়া যায়নি। আমরা শুধু অসহায় হয়ে অপেক্ষা করছি।”
স্থানীয়রা জানান যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। কারণ, বাইরের কোনো ট্রলার বা লঞ্চ আসতে না পারায় নতুন পণ্য ঢুকছে না দ্বীপে। তবে পুরোপুরি সংকট এখনো তৈরি হয়নি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান জানান, “মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই নৌযান চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ফের চলাচল চালু হবে। জরুরি প্রয়োজনে প্রয়োজনে নৌপুলিশ বা কোস্টগার্ডের সহায়তায় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এখনও সক্রিয় রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া ও দমকা বাতাস অব্যাহত থাকায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। নদীপথে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি আছে।
রাঙ্গাবালীর এই বিচ্ছিন্নতা শুধু একটি দুর্যোগকালীন সমস্যাই নয়, বরং এটি দ্বীপাঞ্চলের দীর্ঘদিনের অবকাঠামোগত দুর্বলতার প্রতিফলন। কোনো স্থলপথ না থাকায় শুধু বৈরী আবহাওয়াই নয়, একটি অসুস্থতা বা প্রয়োজনীয়তার মুহূর্তও এখানে হয়ে উঠতে পারে জীবনের জন্য হুমকি।
Leave a Reply