রহিম গাজী রাঙ্গাবালী ( পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের ওপর।
স্থানীয় কৃষকরা জমিতে ফলন বাড়াতে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। বর্ষার সময় এই বিষাক্ত পদার্থগুলো বৃষ্টির পানির সঙ্গে নদী-নালা, খাল ও পুকুরে মিশে যাচ্ছে। এতে পানির প্রাণবৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে এবং প্রজনন ও জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলে স্থানীয়ভাবে পরিচিত নানা দেশি মাছ যেমন—পুঁটি,কৈ, শিং, মাগুর, টাকি, চিংরি,বাইম, বেদা, গজার, বেলে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা চারপাশে নদীবেষ্টিত এলাকা কিন্তু এখন আর আগের মতো দেশি প্রজাতির মাছের দেখা মেলে না। যেখানে একসময় বলা হতো মাছে ভাতে রাঙ্গালী আজ সেখানে মাছের অকাল,
উপজেলার চালিতাবুনিয়ি ইউনিয়নের মো: জাকির গাজী, এক মৎস্য শিকারী বলেন, এক সময় খাল বিল নদী নালায় প্রচুর মাছ মিলতো, যখন ফসলি জমিতে হালচাষ দিতো তখন হালের সাথে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। এখন আর সেই মাছ পাওয়া যায় না, প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই দেশীয় প্রজাতীর মাছ রক্ষণাবেক্ষণ যদি এখন করা না হয়, তাহলে এই মাছ হারিয়ে যাবে। তাই এই মাছ টিকিয়ে রাখার আহ্বান সচেতন মহলের।
রাঙ্গাবালীর মানুষের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য দেশি মাছ। এই মাছের সঙ্গে তাদের জীবিকা, খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতির সম্পর্ক। তাই পরিবেশ রক্ষা ও দেশীয় মাছের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ দরকার, এমনটাই মনে করছেন স্হানীয় বাসিন্দারা ও সচেতন মহল।
তারা জানান, অবিলম্বে সচেতনতা বৃদ্ধি, জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎসাহ, এবং জলাশয় রক্ষা করে টেকসই কৃষিনীতি গ্রহণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে সচেতন মহল দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: শাহাদাত হোসেন বলেন,ফসলি জমিতে রাসায়নিক ও কীটনাশক মিশ্রিত খাবার খেয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্ত হতে চলছে। এমন সময় আসবে এসব মাছ আর চোখে পড়বে না। আমাদের মৎস্য অধিদপ্তর এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে। যাতে এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরে রাখা যায়।
অন্য দিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, অধিক উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করতেই হচ্ছে। এতে দেশীয় মাছের ক্ষতি হচ্ছে। তবে আমরা মাঠ পর্যায় কৃষকদের ফসলি জমিতে গাছের ডাল পুতা , রাতে আলোক ফাদ তৈরি করা, এবং নীমপাতা, মেহগনি গাছের ফল, বেটে ( মিহি) করে একসাথে করে ফসলি জমিতে দিতে পরামর্শ দেই,যাতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। তবে কৃষকদের জৈব পদ্ধতির দিকে ধীরে ধীরে আগানো হচ্ছে।
Leave a Reply