1. mdmirhossainmolla.bd@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@banglarrup.com : Banglar Rup : Banglar Rup
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন: কালীগঞ্জে ফজলুল হক মিলন ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন: কালীগঞ্জে ফজলুল হক মিলন শিবগঞ্জে বিএনপির আয়োজনে হাজার হাজার জনতার ঢল। চৌদ্দগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিএনপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত পলাশতলী ইউনিয়নে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ মিছিল সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার অভিযোগ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রস্তাবলী বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নেছারাবাদে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ নাঙ্গলকোটে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রাণ গেল বৃদ্ধের মনপুরায় পুকুরের পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু

কি ঘটেছিলো সেই রাতে! ফটিকছড়ির কিশোর গ্যাং থেকে মব ভায়োলেন্স শেষ হল মাহিনের জীবন

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫৯ বার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরে চোর সন্দেহে মাহিন নামের এক স্কুল শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।তার পুরো নাম রিহান উদ্দিন মাহিন (১৪)। এই ঘটনায় স্কুল পড়ুয়া তার আরও দুই বন্ধুও মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

নিহত রিহান উদ্দিন মাহিন উপজেলার কাঞ্চননগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সাগর আলী তালুকদার বাড়ির মোহাম্মদ লোকমান(মনু)’র একমাত্র সন্তান।অপর দুই বন্ধু ইসমাঈল হোসেন মানিক (১৫) ও ফারহান তানভীন রাহাতও (১৫) গণপিটুনির শিকার হয়। আহত মানিক স্থানীয় মাইজপাড়ার মোহাম্মদ ইসমাঈলের পুত্র ।আর রাহাত একই এলাকার মাতব্বর বাড়ির মোহামদ ইউসুফের পুত্র। তারা দু’জনই স্থানীয় শাহেন শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে মানিক বর্তমানে চমেক হাসপাতালের দুই নম্বর ওয়ার্ডে ও রাহাত ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে।

কি ঘটেছিল সেই রাতে!

সরেজমিনে জানা যায়,গত সপ্তাহে স্কুল শিক্ষার্থী মাহিন তার দুই বন্ধু রাহাত ও মানিককে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যায়।সেখানে চারদিন বেড়ানোর পর বৃহষ্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত একটার দিকে চট্টগ্রাম শহরে আসেন।চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে একটা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন,রাত ৩ টার দিকে তারা বাড়ির পাশে সাগর আলী তালুকদার বাড়ির চেইঙ্গার ব্রিজ এলাকায় এসে গাড়ি থেকে নামে,তাদের কাছে ভাড়া নেই বললে সিএনজি ড্রাইভারের সাথে তাদের বাদানুবাদ শুরু হয়।

এরিমধ্যে এলাকায় বিভিন্ন সময়ে চুরির ঘটনায় আগে থেকেই সেখানে রাতজেগে পাহারত ছিলো ৭-৮ জন, তারা তাদেরকে ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করে।

প্রাণ বাঁচাতে তিন বন্ধু পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নেয়।আক্রমণকারীরা তাদের ধরে এনে চেইঙ্গার ব্রিজের রেলিংয়ের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাতভর নির্মমভাবে মারধর করে মারধরের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় মাষ্টার নাজিম,দোকানদার তৈয়ব,পল্লি চিকিৎসক নোমান,রড সিমেন্টের দোকানের ম্যানেজার মঈন উদ্দিন ও রায়হান।এছাড়াও ছিলেন স্থানীয় আযাদ,রফিক সহ অনেকে তারা মাহিনদের সিএনজি ড্রাইভারকেও মারধর করে।যদিও কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

জানা যায়, হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা সকাল প্রায় সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত এই কিশোরদেরকে মারধর করে।খবর পেয়ে মাহিনের বাবা মা ছুটে আসলেও থামেনি পিটুনি।একপর্যায়ে মাহিনের বাবা মুহাম্মদ লোকমানকেও মারধর করা হয়।ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে ৯৯৯’র মাধ্যমে ফোন করলে ফটিকছড়ি থানার পুলিশ এসে কিশোরদেরকে উদ্ধার করে।যদিও মাহিন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

আহত স্কুল ছাত্র রাহাতের মা রুজিনা আক্তার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিডিয়াকে বলেন, মাহিন, রাহাতসহ তিন বন্ধু কয়েক দিন আগে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলো।বেড়ানো শেষে তারা গত পরশু চট্টগ্রাম শহর হয়ে বাড়িতে ফিরে এ ঘটনার মুখোমুখি হন।

নিহত মাহিনের মা খাদিজা আক্তার জানান, ‘ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে তৈয়ব সওদাগরের সাথে তার (মাহিনের) বাবার আগে থেকে বিরোধ ছিলো।সেই বিরোধের কারণে চোর আখ্যা দিয়ে মাহিনকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।তিনি বিলাপ করে বলেন,এতটুকু বাচ্চা এমন কি অপরাধ করে ফেলেছে তাকে মেরে ফেলতে হবে।আর মাহিন যদি চুরি করেও থাকে তার তো বিচার করা যেতো।কেন আমার বুকটা খালি করে ফেললো তারা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোর মাহিন এলাকায় ডানপিটে বলেই পরিচিত।তার নেতৃত্বে এলাকায় একটা কিশোর গ্যাংও আছে।ছেলেকে বখে যাওয়া থেকে ফেরাতে বাবা লোকমান নিজের দোকানে মাঝেমধ্যে বসাতেন।তবে মাহিন সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতো।এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু চুরির অভিযোগও রয়েছে এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে মাহিন পাশের বাড়ির মৃত মুসার বাসায় প্রবেশ করে স্বর্ণ চুরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চুরি করা স্বর্ণ বিক্রির অর্থ দিয়ে মাহিন তার বন্ধু রাহাত ও মানিককে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করছে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার অনেকেই।মারধরের এক পর্যায়ে মাহিন চুরির কথা স্বীকারও করে।

মাহিনের বাবা বলেন, আমার ছেলে কক্সবাজার থেকে বাড়িতে ফিরেই কিছু লোকের আক্রোশের শিকার হয়েছে।সে নাকি মুছার বাড়িতে চুরির কথা স্বীকারও করেছে।আমি বলেছিলাম,এরকম হলে সে যা চুরি করেছে আমি জরিমানা দিবো।কিন্তু তারা আমার কথা শুনেননি।আমার মাসুম ছেলেকে আমার সামনেই মেরে ফেললো।আমাকেও তারা মারধর করেছে।

স্থানীয় কয়েকজন জানান,
“প্রশাসনের লোকজন আরও আগে উপস্থিত হতে পারলে মাহিনকে হয়ত জীবিত অবস্থায়ই উদ্ধার করা যেতো”।
এক্ষেত্রে পুলিশের দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিলো কিনা,জানতে চাইলে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমদ বলেন,
“৯৯৯-এ কল পাওয়া মাত্রই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছেলেগুলোকে উদ্ধার করেছি।তিনি আরও বলেন, মাহিনকে হত্যার ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক একটি মামলা করা হয়েছে,এরমধ্যে নোমান ও আজাদ নামের দুইজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।বাকি আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে”।

মর্মান্তিক এই ঘটনায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপি নেতা সরওয়ার আলমগীর মিডিয়াকে বলেন,
” ফটিকছড়িতে মব সৃষ্টি করে কাউকে হত্যা করা মেনে নেওয়া হবেনা,
আমার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বার বার মব ভায়োলেন্স বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন,তিনি আরও বলেন,আমি ফটিকছড়ি প্রশাসনকে বলব আপনারা মব সৃষ্টি ও আইন শৃঙ্খলা অবনতিকারি যেহোক- তাকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসুন”।

ফটিকছড়ি জামায়াতে ইসলামীর আমির নাজিম উদ্দীন ইমোও গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন,
“কোনো হত্যা কাণ্ডকে আমি সমর্থন করি না,
মাহিনের হত্যাকাণ্ড একটি ট্র্যাজেডি,কোনো অপরাধীকে এভাবে হত্যা করার অধিকার কারো নেই।তিনি আরও বলেন,
এরকম বর্বর আচরণ না করে উচিৎ ছিলো মাহিন ও তার বন্ধুদেরকে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া,তিনি মাহিনের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোকও প্রকাশ করেন”।

মাহিনের স্কুলের সহপাঠী
শিক্ষক-শিক্ষিকা ,শিক্ষির্থী স্কুল পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের বক্তব্য, একটি ছোট্ট ভুল বা অভিযোগের কারণে একটি প্রাণ অকালে ঝরে গেল, দুই কিশোর জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মায়ের বুক খালি হয়ে গেল। বাবার চোখের সামনে ছেলেকে হারাতে হলো। সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি,বর্বরতা,নিষ্ঠুরতা,
অমানবিকতার নগ্ন প্রদর্শনী যেন আবারও দেখিয়ে দিলো আমরা কতটা অন্ধকারে নেমে গেছি।আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।আমাদের ছেলে-মেয়েদের সচেতন করতে হবে,
ছেলে-মেয়েদের বিষয়ে অভিভাবকে সচেতন থাকতে হবে,যেনো আমাদের কোনো কোমল-মতি শিশু-কিশোর অপরাধে জড়িয়ে না যায়। তারা আরও বলেন,এ ধরনের কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো আর না ঘটে এবিষয়ে এলাকার সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews