কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরি ইউনিয়নের বির্তুল এলাকা বর্তমানে সবজির রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এখানকার উর্বর মাটি ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে উৎপাদিত হচ্ছে কাঁকরোল, কাঁচকলা, কচু, বরবটি, কচুর লতি, কাঁঠাল ও লিচুর মতো বৈচিত্র্যময় সবজি। এসব সবজির একাংশ রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, দেশের জন্য বয়ে আনছে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা।
তবে, আধুনিক প্যাকিং হাউসের অভাবে এই সম্ভাবনাময় খাতটি ধীরে ধীরে মুখ থুবড়ে পড়ছে। সবজির মান ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহের উপযোগী করতে হলে অত্যাধুনিক প্যাকেজিং ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রয়োজন। কিন্তু প্যাকিং হাউসের অভাবে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
বির্তুল এলাকার সফল কৃষক মোঃ আব্দুল আলিম বলেন, “আমি প্রতিবছর ২০০ কেজির বেশি কাঁকরোল বিদেশে পাঠাই। জমির সেরা ফসলই রপ্তানির জন্য রাখি। কিন্তু প্যাকিংয়ের সুবিধা না থাকায় রপ্তানির পথে অনেক মাল পচে যায় বা মান নষ্ট হয়। এতে লোকসান হয়, দামও কমে যায়।”
একই অভিযোগ করেছেন আরও অনেক কৃষক। তারা বলছেন, যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক প্যাকিং হাউস নির্মিত হতো, তাহলে তারা আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ফসল রপ্তানি করতে পারতেন এবং ন্যায্য মূল্য পেতেন।
এ বিষয়ে কৃষকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও দিয়েছেন। নাগরি ইউনিয়নের উলুখোলা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের পাশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রায় ১২ শতাংশ জমি রয়েছে যা দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। সড়কসংলগ্ন এ জমিটিকে ব্যবহার করে একটি প্যাকিং হাউস নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
একটি আধুনিক প্যাকিং হাউসে সবজি ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ, গ্রেডিং, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং সুবিধা থাকলে রপ্তানি উপযোগী পণ্য প্রস্তুত সম্ভব হবে। এতে শুধু কৃষকরাই নয়, লাভবান হবে দেশও।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, “এই এলাকার কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কিন্তু আধুনিক প্যাকিং হাউস না থাকায় কৃষক ও দেশ—দুই পক্ষই আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। প্যাকিং হাউস নির্মাণে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।”
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “কৃষকরা আমাদের সম্পদ। তাদের উৎপাদিত ফসল যাতে বিদেশে ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা ঢাকার ‘কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় প্যাকিং হাউস নির্মাণের চেষ্টা করছি এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেব।”
এখন কালীগঞ্জের কৃষকদের দৃষ্টি সরকার ও প্রশাসনের ওপর। সরকারি জমি ও প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব। প্যাকিং হাউস নির্মিত হলে বদলে যাবে এলাকার কৃষি অর্থনীতি, খুলবে বৈদেশিক রপ্তানির নতুন দ্বার।
Leave a Reply