মোঃ আবদুল রউফ/স্টাফ রিপোর্টারঃ মানুষের বিবেক হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত। সমাজ এবং এলাকা থেকে অপরাধ নির্মূল করতে হলে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার কোন বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, অপরাধী যখন অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। তবে একজন অপরাধী যদি একের পর এক অপরাধ করে পার পেয়েই যায়, তাহলে সেখানে মানবাধিকার এবং আইনের শাসন অবশিষ্ট আছে- কি- নেই- এটা বুঝতে কারো অসুবিধে হয় না। এমন এক পরিস্থিতির বাস্তব প্রমাণ মিলিছে রাজধানীর পল্লবী থানার মিরপুর এলাকায়।
জানা গেছে, মিল্লাত ক্যাম্পের বিহারি বস্তিতে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রির পাশাপাশি মাদক সেবন সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে পুরো এলাকার সামাজিক চালচিত্র পাল্টে গেছে। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে টানা ১৬ বৎসর দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরের অসাধু অফিসারদের ম্যানেজ করে- জমজমাটভাবে চালিয়ে আসা সেই মাদক ব্যবসা, এখনো স্বৈরাচারী সরকারের স্টাইলে চালিয়ে যাচ্ছে কতেক মাদক ব্যবসায়ীরা। কোটি কোটি টাকার মালিকে পরিণত হওয়ার পরও থেমে নেই মাদক ব্যবসা। ব্যবসায়ীদের টাকার নেশায় এদেশের লক্ষ লক্ষ সোনার ছেলেদের জীবন ধ্বংস করছে মাদকের নেশা দিয়ে।
সূত্র জানায়, অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে আগে থেকেই পরিচিত রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকা। আওয়ামী সরকারের আমলে প্রকাশ্যেই শুরু হওয়া ভয়াবহ মাদক ব্যবসাকে নির্মূল করতে‘ বর্তমান সরকারও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যম গুলো বরাবরের মত লিখে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিকারের যোগফল শূন্যের কোঠায়। আগামী নির্বাচনে জনগনের দেয়া ভোটে যদি বিএনপি সরকার গঠন করে- পল্লবী থানার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মাদক নির্মূল করা হবে বলে বিএনপির নেতাকর্মীদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় দিন গুনছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে বড় চ্যালেঞ্জে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানী পল্লবী থানার আনাচে কানাছে খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক-বাণিজ্য। মিরপুর-১১ মিল্লাত ক্যাম্পের বিহারি বস্তি এলাকাতে হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদক। কিছু অসাধু প্রশাসনের সদস্যদের ম্যানেজ করে, মাদক কারবারিরা জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদক ব্যবসা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পল্লবীর বস্তিকেন্দ্রিক মাদক স্পট ও বিক্রেতার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। রাজধানীর মিরপুর এলাকার পল্লবী থানাধীন মিল্লাত ক্যাম্প, রহমত ক্যাম্প, কুর্মিটোলা বস্তি, নিউ কুর্মিটোলা বস্তি, রাজুর বস্তি এবং কালাপানি বস্তিজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে এক ভয়ঙ্কর মাদকের আস্তানা। সাম্প্রতিক সময়ে এসব এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অভিযানে কয়েকজন মাদক বিক্রেতা গ্রেপ্তার হয়েছে, তবু থেমে নেই মাদকের রমরমা বিকিকিনি।
সরেজমিন কয়েকটি মাদক স্পটে গিয়ে জানা যায়, যারা নিয়মিত মাদকসেবীরা হাত বাড়ালেই মাদক পেয়ে যায়। এ মাদক বিক্রির কৌশল হিসেবে ফোনে ব্যবহার হয় সাংকেতিক ভাষা। এসব স্পটগুলোতে শুধু এলাকার আশপাশের লোকজনই কাস্টমার। মাদকদ্রব্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হিরোইনের।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, গত ৪ বছরে দেশে অন্তত ৪০ লাখ মাদকসেবী বেড়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ১ কোটির বেশি। মাদকসেবীদের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। দেশের ৩০ শতাংশ যুবক মাদকে জড়িয়ে পড়েছে। সহজলভ্য হওয়ায় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নতুন শিক্ষার্থী জড়াচ্ছে মাদকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের তথ্যমতে, পল্লবীতে সংঘটিত হওয়া অধিকাংশ অপরাধের পেছনে রয়েছে মাদক। মাদক সরবরাহে বাহক এবং বিক্রিতা হিসেবে এখন নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক তরুণী মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।
তথ্য বলছে, পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম কখনোই কোন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে অন্তরালে কিংবা প্রকাশ্য আপোষ করেন নি। মাদকের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় কঠোর মনোভাব নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার পরও- কোন প্রশংসনীয় সফলার অর্জন করতে পারেননি। থানার অসাধু বেশ কয়েকজন অফিসারের সাথে মাদক সাম্রাজীদের গোফন সম্পর্ক থাকার ফলে, অভিযানের পূর্বেই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় প্রতিটি অভিযানে ব্যর্থতার ঘানি টানতে হয়েছে। অপরদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের কতেক অসাধু অফিসার, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের থেকে প্রতি সপ্তাহ- পনের দিন- এবং কেউ কেউ মাসোহারা মোটা অংকের টাকা গ্রহন করে, মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেটকে দিন দিন শক্তিশালী করে তুলেছেন। তাদের আস্কারা পেয়ে প্রতিনিয়ত বেপরোয়া হয়ে উঠছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় দেখা গেছে, সেখানে অনেকটা প্রকাশ্যেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা, ইয়াবা; এমনকি হেরোইন পর্যন্ত। মাদক বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষা করছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। আর ক্রেতারাও প্রকাশ্যে তাদের কাছ থেকে কিনছেন মাদক। বেশিরভাগ ক্রেতাই সিএনজি এবং রিক্সা চালক, বাসের হেলাপারসহ নিম্নআয়ের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে এক পর্যবেক্ষণে জানা যায়, কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এমন কয়েকজন মাদক সাম্রাজীর তথ্য এবং মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত থাকা বিভিন্ন সংস্থার অফিসারদের নাম ব্যাপক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সকল তথ্য প্রমাণাধী এ প্রতিবেদকের হাতে এখনো পৌছায়নি বলে- বিস্তারিত নিয়ে আগামী সংখ্যায় থাকছে আরেকটি প্রতিবেদন।
Leave a Reply