নিজস্ব প্রতিনিধি: সরকার পতনের ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশে যখন বিজয়ের আনন্দে সাধারণ মানুষ উল্লসিত, ঠিক তখন রাজধানীর মিরপুরে সৃষ্টি হয় ভিন্ন এক বিভীষিকাময় চিত্র। সোমবার বিকেল ৩টার পর থেকেই পল্লবী থানার সামনে জড়ো হতে থাকে ক্ষুব্ধ জনতা। মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে ওঠা এই বিক্ষোভে ভাঙচুর করা হয় থানার ভেতর ও বাইরে থাকা পুলিশি সরঞ্জাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক সরকারি গাড়ি ও মোটরসাইকেল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় থানার ভেতরে কোনো পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন রিপন বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে পুলিশের দমন-পীড়নে মানুষ এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে যে, কেউ আর বাধা মানছে না।”
সুযোগ নেয় অস্ত্রলোভী গ্যাং
এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেয় ভাষানটেক ও বাউনিয়াবাধকেন্দ্রিক ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং। অভিযোগ রয়েছে, ভাষানটেকের জহির কমিশনারের ভাই ‘পাগলা মামুন’, রূপচান, সাবু, রাসেল, ডাবলুর ছেলে সজিব, মামুনের ভাগ্নে মানিক এবং কুখ্যাত কিশোর গ্যাং লিডার আশিক থানা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে গচ্ছিত সরকারি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়।
এক গোপন সূত্রের বরাতে গোয়েন্দা প্রতিবেদকের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, ডাবলুর ছেলে সজিব লুট করা অস্ত্র বাসায় নিয়ে গচ্ছিত রাখে এবং গভীর রাত পর্যন্ত সেখানেই চলে গোপন মিটিং। এমনকি সজিবের শোবার ঘরে পিস্তল হাতে তোলা একটি ছবিও প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। যদিও সেটি যে সজিবের ঘর, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়নি, কারণ বিছানার চাদর বা ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, “আমাদের দুটি অস্ত্র মিসিং রয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই ‘সিজনাল’ নামের পিস্তল।”
ত্রাসের রাজত্ব ও প্রকাশ্য অস্ত্র মহড়া
এই ঘটনার পর থেকেই পল্লবী, মিরপুর ১২, বাউনিয়াবাধ, আদর্শ নগর, পলাশনগর, ভাষানটেক ও কালসী এলাকায় শুরু হয় গ্যাং সদস্যদের প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া। স্থানীয়রা জানান, প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
আশিক বাহিনীর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, এই গ্যাং বর্তমানে ভাড়ায় ‘সার্ভিস’ দিচ্ছে। এক পক্ষের হয়ে অপর পক্ষের জমি ও বাড়ি দখল, গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি—সবই চলছে টাকার বিনিময়ে। ৫ আগস্টের পর কারামুক্ত হওয়া বহু দাগি সন্ত্রাসী আশিক বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। কেউ কেউ আবার বিদেশে পলাতক থেকেও মোবাইল ফোনে গ্যাং পরিচালনা করছে। এসব বিষয়ে থানার গোয়েন্দা ইউনিট অবগত থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আশিকের রাজনৈতিক রূপান্তর
প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, আশিক বর্তমানে ছাত্রদলের পরিচয়ে সক্রিয় হলেও, অতীতে সে ছিল ছাত্রলীগের কুখ্যাত ক্যাডার। তার বাবা খালেকুজ্জামান জীবন ছিলেন যুবলীগের একজন পদধারী নেতা। আশিকের নামে একাধিক মামলা ও সাজা রয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে সে এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
জনগণের আতঙ্ক ও কঠিন প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আশিক বাহিনী’কে এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। এলাকায় দিনরাত চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, গুলি বর্ষণ এবং চাঁদাবাজি। পল্লবী যেন এক অঘোষিত সন্ত্রাসী রাজ্য।
Leave a Reply