1. mdmirhossainmolla.bd@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@banglarrup.com : Banglar Rup : Banglar Rup
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভোলার তজুমদ্দিনে সন্ত্রাসী গফুর বাহিনীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে দুই জন এখনো সক্রিয় মাদকের সিন্ডিকেট! শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ রোড রেল গেইট (শ্যামলী) এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় এক পল্লি চিকিৎসকের মৃত্যু প্রচারেই প্রসার প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই রুয়েট গেটে বিএনপির কর্মী সম্মেলনের প্রস্তুতি ; শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে স্থান ত্যাগ করলো নেতাকর্মীরা ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিন বাকেরগঞ্জ উপজেলা গারুড়িয়া ইউনিয়ন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কমিটি গঠন সম্পন্ন কালীগঞ্জে ২৫ পিচ ইয়াবা সহ এক বিক্রেতা গ্রেপ্তার পল্লবীতে মহিলা দলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত পাবনার কৃতিসন্তান গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আযম সুজা

পাবনার কৃতিসন্তান গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আযম সুজা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪০ বার

কবির আহমেদ: পাবনা জেলার কৃতি সন্তান গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আযম সুজা ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জর্ডানের প্রধান বিমান ঘাঁটি মাফরাকে ইসরাইলি বিমান আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং ইসরাইলের চারটি বিমান ভূপাতিত করেন। বিধ্বস্ত বিমান থেকে প্যারাসুটে অবতরণকারী দুই ইসরাইলি বৈমানিককে তিনি বন্দি করেন। এ দু’জন পাইলটের সঙ্গে বন্দিবিনিময়ে ইরাক ও জর্ডানের প্রায় চার হাজার সৈন্য মুক্তি পায়। যুদ্ধে অসামান্য সফলতার কারণে জর্ডানের বাদশাহ হোসেন সাইফুল আযমকে রাজকীয় খেতাব ‘হুসাম-এ-ইসতেকলাল’ এবং ইরাক সরকারের সর্বোচ্চ সাহসী খেতাব ‘নথ-এ-সুজা’-এ ভূষিত করেন। জর্ডানে সাইফুল আযমের স্মৃতিরক্ষায় জর্ডানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নামকরণ করা হয় ‘সুজা রোড’। তিনি ছিলেন মুসলিম বিশ্বের এবং এশিয়া মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈমানিক। তিনি বিএনপি মনোনিত পাবনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য (১৯৯১-১৯৯৬) ছিলেন।

সাইফুল আযম সুজা ১৯৪১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার খলিশাদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ ডব্লিউ নূরুল আযম ও সামসুন নাহারের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সাইফুল আযম দ্বিতীয়।

সাইফুল আযম কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ঈশ্বরদী সাঁড়া মাড়োয়ারী স্কুল এবং বনওয়ারীনগর করনেশন বনমালী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের সারগোদা বিমান বাহিনীর পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে সিনিয়র ক্যামব্রিজ পাস করার পর ১৯৬০ সালে তিনি গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেয়া সাইফুল আযম ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত টেক্সাস, ফ্লোরিডা এবং আরিজোনাতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রিজ বিমান বাহিনী ঘাঁটি থেকে জিডি (পি) ব্রাঞ্চে তিনি গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। আমেরিকার লুক বিমান ঘাঁটি, আরিজোনাতে সেসনা, টি ৩৩, টি-৩৭, এফ ৮৬ ‘সেবার জেট’ জঙ্গীবিমান চালনায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯৬২ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম জেট স্কোয়াড্রন টিমের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের রিসালপুর বিমান ঘাঁটিতে টি ৩৭ বিমানের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে সাইফুল আযম সারগোদা বিমান ঘাঁটির ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রন হতে সেবার জেট জঙ্গীবিমান দ্বারা ভারতের ভূমিতে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর ওপর সফল আক্রমণ চালান। তাঁর যুদ্ধ কৌশল ভারতীয় বিমান বাহিনীর যোদ্ধাদের আতঙ্কিত ও পরাভূত করে। তিনি আক্রমণকারী (ভারতের) দুটি জঙ্গীবিমানের মধ্যে একটি বিমান ফোল্যান্ড-ন্যাটকে ভূপাতিত করে তাঁর প্রথম বিজয় অর্জন করেন এবং যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করেন। যুদ্ধে সফলতার জন্য তিনি পাকিস্তানের বিশেষ গ্যালান্ট্রি পুরস্কার ‘সিতারা-ই-জুরাত’ পুরস্কারে ভূষিত হন এবং তাঁকে অনুদান হিসেবে পাঞ্জাব প্রদেশে ২৫ একর ফসলী জমি প্রদান করা হয়।

সাইফুল আযম ১৯৬৬ সালে রিসালপুর বিমান বাহিনী ঘাঁটির ২ নম্বর স্কোয়াড্রনের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং টি ৩৭ এয়ার বিমানের প্রশিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে জর্ডানের রাজকীয় বিমান বাহনীর উপদেষ্টা নিযুক্ত হন এবং জর্ডান বিমান বাহিনীর ১ নম্বর স্কোয়াড্রনে ‘হকার হান্টার’ বিমান পরিচালনা করেন। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শেষে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং সিকোয়ান গুরুভিচ মিগ ১৯-এর চীনা সংস্করণ চেনিয়াং এফ ৬ স্কোয়াড্রনের কমান্ডার নিযুক্ত হন। এরপর তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফাইটার লিডার স্কুলের কমান্ডার নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তানের ‘সিতারা-ই-বাসালত’ খেতাবে ভূষিত হন। এজন্য তাঁকে পাঞ্জাব প্রদেশে ১২.০৫ একর ফসলি জমি দেয়া হয়।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ মতিউর রহমানের যাত্রীসহ ‘পিআইএ’র একটি বোয়িং ৭০৭ বিমান তিনি ভারতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্ত তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং ২১ দিন অমানুষিক নির্যাতনের পর তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে তাঁর পূর্বের সাফল্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর সমস্ত সম্পদ ফেলে দেশমাতৃকার টানে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফ্লাইট সেফটি পরিচালক নিযুক্ত হন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে তিনি পরিচালক (অপারেশন), ঘাঁটি বাশারের বেস কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৮ সালে বিমান বাহিনী থেকে অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আযম সুজা ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা ৩ (ফরিদপুর-ভাঙ্গুড়া-চাটমোহর) আসন থেকে নির্বাচন করে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোটে জয়লাভ করেন। সেসময় তিনি জাতীয় সংসদের অনুমিত কমিটি এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর বিশেষ আমন্ত্রণে ‘গ্যাদারিং অফ ঈগলস-২০০০’ অনুষ্ঠানে গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আযম সুজা (অব.) যোগ দেন। ওই অনুষ্ঠানে ২২ জন জীবিত বৈমানিককে বিশ্বের সেরা ও সাহসী বৈমানিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মুসলিম বিশ্বের এবং এশিয়া মহাদেশের একমাত্র বৈমানিক ছিলেন সাইফুল আযম।

পারিবারিক জীবনে তিনি ১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে সিলেটের প্রয়াত আবদুল মান্নান চৌধুরীর ৫ম কন্যা নিশাত আরার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক পুত্র ও দুই কন্যা। পুত্র ফেরাস আযম সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে কানাডায় কর্মরত। বড়ো মেয়ে অনিলা আযম ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এবং ছোটো মেয়ে অনিতা আযম কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে আমরেকিায় কর্মরত। সাইফুল আযম সুজা ২০২০ সালের ১৪ জুন ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews