আ: রহিম গাজী/রাঙ্গাবালী ( পটুয়াখালী ) সংবাদদাতা : জন্ম থেকে মৃত্যু – এই পথচলার কেউ ভাগ্যবান হন, আর কেউ লড়াই করেই কাটিয়ে দেন পুরো জীবন। এমনই একজন জীবনসংগ্রামী মানুষ হচ্ছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ৬৫ বছর বয়সী বিজয় শীল।
জানা যায়, বিজয় শীলের শৈশব কেটেছে দশমনিয়া উপজেলার দশমনিয়া ইউনিয়নে। প্রায় চার যুগ আগে তিনি জীবিকার সন্ধানে চলে আসেন রাঙ্গাবালীর বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নে। শুরু করেন মানুষের চুল কেটে জীবিকা নির্বাহ। তখন হাটে, বাজারে মানুষের চুল কেটে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলতো তার সংসার।
কালের পরিবর্তনে এখন মানুষ আর খোলা জায়গায় বা রাস্তার পাশে বসে চুল কাটে না। আর আয় তেমন করতে পারে না।
এখন বয়স হয়ে গেছে
কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। অভাবের তাড়নায় জীবনের তাগিদে এখন ও চুল কাটা বাদ দেননি।
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নে কাটাখালী বাজারে কৌতূহলবসত বিজয় শিলের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান,
বাড়ির ভিটা ছারা আমার কিছুই নেই,অভাবের কারনে আমি চলে আসি এই চর অঞ্চলে মানুষের মাথার চুল কাটতে।
নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অভাবের সংসার তার মধ্যে চার টি মেয়ে, দুই মেয়ে কে এইচ এইচ সি পাশ করিয়েছি, এবং মেয়েদের বিবাহ দিয়েছি, অনেক কষ্ট হয়েছে। মানুষের কাছ থেকে টাকা ঋন করে বিবাহ দিয়েছি। এখন ও টাকা পরিশোধ করতে পারি নাই। হিসাব করলে ৩ লক্ষ্যে টাকার বেশী আমার কাছে পাইবে। বয়স হয়ে গেছে আগের মত কাজ করতে পারি না। আর আগের মতো কেউ চুল কাটতে আসে না।
কেমন আয় হয় জানতে চাইলে বলেন,কোনোদিন হয়তো ২০০-৩০০ টাহা আয় হয় আবার মোটেও আয় হয় না। এখন তো আগের মতো রাস্তার পাশে বসে চুল কাটে না, এখন সকলে বড় বড় সেলুনে বস চুল কাটে , ছেলেরা আমার কাছে আসে না তারা সেলুনে বসে চুল কাটে।
আমার অত টাহা নেই যে একটা সেলুনের দোকান দেব। যা ইনকাম অয় তা দিয়ে কষ্ট কইরে চলতে হয় । এখানে নিজের বাড়ি নাই,জমি নাই। পরের জায়গায় থাহি কোনো রকম জুপরি ঘর তুইলে। এখানে আমি একাই থাকি, আমার চারপাশে মুসলিমদের বসবাস তাই এই জুপরি ঘরে আমার বসবাস।
স্হানীয় ইউপি সদস্য মো.সোহাগ তালুকদার বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই বিজয় শিলের কাছে চুল কাটতাম। এখনো তিনি চুল কাটেন ঠিকই, তবে আগের মতো ভিড় নেই। যুগের পরিবর্তনে মানুষ আধুনিক সেলুনে চলে গেছে। আমিও চেষ্টা করি তার পাশে দাড়াতে।
এ ভাবে দিন কাটছে বৃদ্ধ বিজয় শীলের। সরকারি বা বেসরকারী সহায়তা না পেলে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার মতো অসহায় মানুষেরা পড়বেন আর ও বড় সংকটে – এমনটাই আশঙ্কা স্হানীয়দের।
বিজয় শীলের মতো অনেকেই আজ হারিয়ে যেতে বসেছেন। একসময় যারা ছিলেন গ্রামের অন্যতম প্রয়োজনীয় ব্যক্তি, আজ তারা আধুনিক চাপে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন নি:শব্দে।
Leave a Reply