কাজী আরিফ হোসেন: গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনকালে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।
অভিযোগ গঠন শুনানিকালে ট্রাইব্যুনাল তার কাছে জানতে চান তিনি দোষী না নির্দোষ। এ সময় সাবেক এই আইজিপি দোষ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি দোষ স্বীকার করলাম। আমি স্বেচ্ছায় মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত পরিস্থিতির সত্য এবং বিস্তারিত প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।’
ট্রাইব্যুনাল চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের আরজি মঞ্জুর করে। পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে কারাগারে তার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
আইনজীবীরা বলেন, একই মামলায় যখন কোনো আসামি স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনা বা পরিস্থিতি তুলে ধরেন তখন তিনি রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হিসেবে অভিহিত হন। এই সুবিধা এমন ব্যাক্তিদের দেওয়া হয় যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এবং যাদের দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে অন্য আসামিদের কৃত অপরাধের পুরো ঘটনা প্রকাশ হয়।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাক্ষ্যের মাধ্যমে যদি অপরাধের ঘটনার বিস্তারিত সত্য উঠে আসে তাহলে ট্রাইব্যুনাল তাকে ক্ষমা করতে পারেন কিংবা অন্য কোনো আদেশ দিতে পারেন। এটা একান্তই ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন দোষ স্বীকার করেছেন এবং তিনি বলেছেন, তিনি (চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন) একজন সাক্ষী হিসেবে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সব ঘটনা উদঘাটনের ব্যাপারে সহায়তার মাধ্যমে তিনি অ্যাপ্রোভার হতে চেয়েছেন এবং তার প্রার্থনা আদালত মঞ্জুর করেছেন। সুতরাং পরবর্তীতে আদালতের সুবিধাজনক সময়ে তিনি তার বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে আদালতকে প্রকৃত ঘটনা, অপরাধী কারা, কাদের মাধ্যমে কিভাবে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল সেই তথ্য উদঘাটনে সহায়তা করবেন। তিনি সাক্ষী হিসেবে গণ্য হবেন, এটাই আদালত বলতে চেয়েছেন।’
এক প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বাংলায় বললে রাজসাক্ষী। কিন্তু আমাদের আইনে যেটা আছে অ্যাপ্রোভার। সেই হিসেবে তার আবেদন ছিল, সেই হিসেবে তিনি গণ্য হবেন এবং তিনি এখন জেলেই থাকবেন। কিন্তু তার বক্তব্য গ্রহণের পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালত দেবেন।’
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু তিনি অ্যাপ্রোভার হতে চেয়েছেন সেহেতু তার নিরাপত্তা সংকট হতে পারে; এই আশঙ্কায় তার আইনজীবী নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আদালত যথাযথ আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
অপর এক প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, তার সাক্ষ্যের মাধ্যমে যদি ট্রু এবং ফুল ডিসক্লোসার হয় তখন আদালতের ইচ্ছানুযায়ী আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন বা অন্য কোনো আদেশ দিতে পারেন। এটা পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার।’
Leave a Reply